1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
অনন্য ও মহিমান্বিত মাস হলো পবিত্র রমজান - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ | ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ

অনন্য ও মহিমান্বিত মাস হলো পবিত্র রমজান

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, এপ্রিল ৩, ২০২৩

মানবজীবনের আত্মিক, সামাজিক ও দৈহিক উপকারে সিয়াম সাধনা বা রোজার অবদান অপরিসীম। রোজা শুধু ধর্মীয় ফরজ ইবাদতই নয়, দৈহিক সুস্থতা লাভে রোজার ভূমিকা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

অনন্য সাধারণ ও মহিমান্বিত মাস হলো পবিত্র রমজান। এ মাস স্তম্ভে নিঃসন্দেহে অন্যান্য মাস থেকে আলাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। রমজান শব্দের অর্থ বিদগ্ধ করা। আরবী রামাদু থেকে রমজান যার অর্থ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেওয়া। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম হলো রমজান মাসে সিয়াম পালন। এই সিয়াম বা রোজা পালন করা ফরজ। অল্প বয়ষ্ক বা শিশুদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়। তবে শিশুরা রোজা পালন করতে চাইলে হযরত ওমর(রাঃ) তাদের উৎসাহিত করতেন যাতে শিশুরা সিয়াম পালনে অভ্যস্ত হয়। সাওমের অভিধানিক অর্থ-সাওম শব্দটি আরবী, একবচন, এর বহু বচন হলো সিয়াম। সাওম পালনকারীকে সায়েম বলা হয়। ফার্সিতে বলা হয় রোজা এবং রোজা পালনকারীকে বলা হয় রোজাদার। পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা। অভিধানে শব্দটির অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে,“কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা, সাওম পালনকারীকে সায়েম বলা হয় এজন্য যে, সে খাদ্য, পানীয় ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থেকেছে।” “চুপ থাকা ব্যক্তিকে সায়েম বলা হয়, কেননা সে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছে। এমনিভাবে যে ঘোড়া খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রয়েছে তাকে ও সায়েম বলা হয়।”ইবন আরাবী রহ. বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যখন গাছের নিচে ছায়া নিচ্ছে তাকে বলা হয় সমার রজুল।” (লোকটি ছায়ায় থেকে চলাফেরা থেকে বিরত থেকেছে)। লাইস রহ. বলেছেন,“সাওম হলো খাদ্য ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা।” যেমন কুরআনে এসেছে,“অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব, আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৬] সুফিয়ান ইবন উয়াইনাহ রহ. বলেছেন, “সাওম অর্থ ধৈর্য। কেননা মানুষ খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সহবাস থেকে ধৈর্য ধারণ করে। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পড়েন,“কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই”।

সাওমের পারিভাষিক সংজ্ঞা:আল-কামুসুল ফিকহি গ্রন্থে বলা হয়েছে,“সাওম হলো, নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে নিয়তসহ খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ বিষয় থেকে বিরত থাকা।”[ আল-কামুসুল ফিকহি, পৃ: ৩৫০]কারও কারও মতে, সাওম হচ্ছে মুকাল্লাফ তথা শারিয়াতের নির্দেশনা প্রযোজ্য এমন লোকের পক্ষ থেকে নিয়তসহ রাত থেকে খাবার-পানীয় থেকে বিরত থাকা। যুরযানী রহ. বলনে,“সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ এবং যৌনাচার থেকে নিয়তের সাথে বিরত থকার নাম হলো সাওম।”[তারিফাত লিল জুরজানী, পৃ: ১৭৮]

বদরুদ্দীন আইনি রহ. বলেন, “খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ এ তিনটি কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো সাওম।”[ আল বিনায়া শরহে হিদায়া, ৪/৩।] শারিয়াতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শারিয়াতে নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকাকে সাওম বলে। যেহেতু এই আমলটি দিনের শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পালন করা হয় তাই একে রোজা বলা হয়। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। [তাহাবি, আহমদ ইবনে ইবরাহিম]রোজার প্রাথমিক ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন কিছু জানা যায় না। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দার্শনিক স্পেন্সার নিজের বই Principles of Sociology -তে কতগুলো বন্য সম্প্রদায়ের উদাহরণ এবং জীব বৃত্তান্তের ওপর গবেষণা করে লিখেছেন যে, রোজার প্রাথমিক মানদণ্ড এভাবেই হয়তো হয়ে থাকবে যে আদিম বন্য যুগের মানুষ স্বভাবতঃই ক্ষুৎ-পিপাসায় আক্রান্ত থাকতো এবং তারা মনে করতো যে, আমাদের আহার্য বস্তু আমাদের পরিবর্তে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃতদের নিকট পৌঁছে যায়। কিন্তু অনুমানসিদ্ধ উপাত্তকে যুক্তি ও বুদ্ধির আওতাভুক্ত লোকেরা কখনো স্বীকার করে নেয়নি। [ইনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা, খ. ১০, পৃ.১৯৪ কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,”হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার”। (সূরা বাকারা: ১৮৩)[২]

হযরত আদম যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পযর্ন্ত তার তাওবাহ কবুল হয়নি। ৩০ দিন পর তার তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তার সন্তানদের উপরে ৩০টি রোযা ফরয করে দেয়া হয়।[৩]।নূহ (আ.)-এর যুগেও রোজা ছিল। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হযরত নূহ (আ.) ১লা শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোযা রাখতেন।— ইবনে মাজাহ ১৭১৪ (সনদ দুর্বল)[৪]হযরত ইবরাহীমের যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।হযরত দাউদ (আ.) এর যুগেও রোযার প্রচলন ছিল। হাদিসে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় রোযা হযরত দাউদ (আ.)-এর রোযা। তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোযায় থাকতেন।[৫]আরববাসীরাও ইসলামের পূর্বে রোযা স¤পর্কে কমবেশী ওয়াকিফহাল ছিল। মক্কার কুরাইশগণ অন্ধকার যুগে আশুরার (অর্থাৎ ১০ মুহররম) দিনে এ জন্য রোযা রাখতো যে, এই দিনে খানা কাবার ওপর নতুন গেলাফ চড়ানো হতো।[৬][৭] মদীনায় বসবাসকারী ইহুদীরাও পৃথকভাবে আশুরা উৎসব পালন করতো।[৮] অর্থাৎ ইহুদীরা নিজেদের গণনানুসারে সপ্তম মাসের ১০ম দিনে রোযা রাখতো।[৯]রোজার মূল লক্ষ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। রোজাদার ব্যক্তি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বৈধ পানাহার থেকে আল্লাহর নির্দেশে নিজেকে বিরত রাখে, নির্জনে যেখানে কারও দেখার কোন সম্ভাবনা নাই সেখানেও কিছুই পানাহার করে না, কারন রোজাদার বিশ্বাস করে সবখানেই আল্লাহ বিরাজমান। দীর্ঘ একমাস এই সাধনার ফলে রোজাদারের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়, রোজাদার পরিপূর্ণ মোত্তাকীরূপে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করে। যার ফলে পরবর্তী ১১ মাস মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনায় গুণগত উন্নতি সাধিত হয়। রোজার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য হচ্ছে পূর্ণ একমাস সংযমের মাহাত্ম্য। দিনভর খালিপেটে থাকার মানসিক ও শারীরিক উপকারিতাও অটুট থাকে। মার্কিন চিকিৎসক মিশেল মোসলে ক্ষুধা পেটে থাকার শারীরিক উপকারিতা নিয়ে তার কিছু মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজে প্রতি সপ্তাহে দুদিন নিয়ম করে উপোস থেকেছেন। দেখা গেছে তার শরীরের ক্যালরী ৬০০ কমে গেছে। তিনি জানিয়েছেন এভাবে উপোস থাকার মধ্য দিয়ে জীবনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও বেশীদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। আরব আমিরাতের একদল গবেষক জানিয়েছেন দীর্ঘ একমাস নিয়ম করে উপোস থাকার ফলে শরীরের কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমে এবং এতে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। রক্তে কোলেষ্টেরলের উপস্থিতি উল্লোখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাওয়ায় কমে যায় স্ট্রোক অথবা হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি। তাছাড়া শরীরের হজম শক্তিও বাড়ে। সারাদিন না খেয়ে থাকার কারনে দেহ থেকে এক ধরনের হরমোন তৈরি হয় যার নাম এডিপনেসটিন। এটি শেষ রাতে খাওয়া এবং সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে তৈরি হয়। গবেষকরা বলেছেন রোজা থাকার কারণে শরীরে অনেক বিষাক্ত উপাদানও মরে যায় বা নিঃশেষ হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় রোজার মাধ্যমে ২১ প্রকার রোগের চিকিৎসা অর্জন করা সম্ভব।

মহাত্মা গান্ধী প্রায় সারা বছরই রোজা থাকতেন, তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়মিত রোজা রাখতে পরামর্শ দিতেন। রোগ নিরাময়ের যতগুলো প্রতিকার এবং প্রতিষেধক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ প্রতিকার হলো রোজা। সমস্ত শরীরে সারা বছর যে জৈব বিষ জমা হয় এক মাসের রোজা রাখার ফলে সেই জৈব বিষ শরীর থেকে দূরীভূত হয় খুব সহজেই। এই জৈব বিষ দেহেরায়ু এবং অপরাপর জীবকোষকে দুর্বল করে দেয়। শরীরের রক্ত প্রবাহকে রোজা পরিশোধন করে এবং সমগ্র প্রবাহ প্রণালিকে নবরূপ দান করে। রোজায় ঊর্ধ্ব রক্তচাপ তথা হাইপ্রেসার ও অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধিগুলো কমাতে সাহায্য করে। ড. ডি ডিউই বিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন- রোগ-জীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলি হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, তাহলে দেখবে রূগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকারভাবে উপবাস থাকছে রোগটি। চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক ডা. হিপ্রোক্রাইটস বহু শতাব্দী আগেই বলেছেন, অসুস্থ দেহে যতই খাবার দেয়া হবে ততই রোগ বাড়তে থাকবে। তাহলে বুঝা গেল উপবাসব্রতই রোগ নিরাময়ের অপরিহার্য অবলম্বন। রোগের অজুহাতে রোজা না রাখার দিকে না ঝুঁকে রোজা রেখেই রোগমুক্তির পথ ধরার পক্ষে বলেছেন খ্যাতিমান চিকিৎসকরা। এ জন্য অন্য ধর্মাবলম্বী হয়েও নিয়মিতভাবে উপবাসব্রত পালন করতেন মহাত্মা গান্ধীও।সাহরির সময় উপযুক্ত খাবার ক্যাকারাইড, ডাই স্যাকারাইড, ও পলি স্যাকারাইড জাতীয় মিশ্র খাবার এবং প্রোটিন, চর্বি, শাকসবজিও ফলমূলসহ সূক্ষ্ম ও অভ্যাসগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস রোগীরা এক মাস রোজা রাখলে ডায়াবেটিস নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণে এসে থাকে। এভাবে রোজা সব রোগের নিরাময়ে সহায়ক। বছরব্যাপী অনিয়ন্ত্রিত যথেচ্ছ খেয়ে দেয়ে শরীরে যে বর্জ্য ও চর্বি জমে যায় রোজার মাধ্যমে তা শোধন হয়। রোজায় রয়েছে সুস্থ, সবল জীবনের নিশ্চয়তা। রোজার গুরুত্ব রমজানের রোজা হচ্ছে ইবাদতের মাঝে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, সালাত ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। রোজার আরবি শব্দ সাওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। সাওম হলো, প্রত্যেক সন্তান, বালেগ মুসলমান নর-নারীকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পযর্ন্ত রোজার নিয়তে পনাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।সুতরাং রমজান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং হায়েজ নেফাজমুক্ত (মাসিক ও সন্তান হওয়ার পরে রক্তস্রাব) প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ।এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার(সূরা বাকারা-১৮৩)অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,সুতরাং তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।সুতরাং রমজান মাসে সাওম পালন করা ফরজে আইন।কোনো মুসলমান যদি রমজান মাসের একটি রোজাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে বড় গুনাহগার ও জঘণ্য অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের খেয়ানতকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।

ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীদের জন্য হাদিস শরিফে কঠিন শাস্তির কথা রয়েছে। হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার কাছে দুইজন ব্যক্তি আগমন করলেন। তারা বাহু ধরে আমাকে এক দূর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। এরপর আমাকে বললেন, আপনি পাহাড়ের উপরে উঠুন। আমি বললাম, আমি উঠতে পারবো না। তারা বললো, আমরা আপনাকে সাহায্য করবো। আমি উপরে উঠলাম। যখন আমি পাহাড়ের সমতল ভূমিতে পৌঁছালাম, হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিসের আওয়াজ? তারা বললেন, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারা আমাকে নিয়ে এগিযে চলল। হঠাৎ কিছুলোক দেখতে পেলাম, তাদের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তা থেকে তাদের রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলতো তারা এরা।(মুস্তাদরাকে হাকিম ১৬০৯)

রমজান মাসের একদিন রোজা না রাখলে মানুষ যে শুধু গুনাহগার হবেন তা নয়, বরং এ রোজার পরিবর্তে সারা জীবন রোজা রাখলেও এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানে একটি রোজাও ভঙ্গ করে, তিনি আজীবন রোজ রাখলেও এ রোজার হক আদায় হবে না।(সহীহ বুখারি ৪/১৫০)
হাদিসের আলোকে রোজার কিছু ফজিলত প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোজার বিষয়ে আছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য ঘোষণা। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মানুষের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকির সওয়াব দশগুণ থেকে সাত শত গুণ পযর্ন্ত হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টা আলাদা। কেননা তা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।(সহীহ মুসলিম ১১৫১)

হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ নিজের উপর অবধারিত করে দিয়েছেন যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজা রাখার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।হযরত আবু ওমামা রাঃ হতে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহর (সাঃ) দরবারে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসুলুল্লাহ বললেন, তুমি রোজা রাখ। কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন, তুমি রোজা রাখ। (মুসনাদে আহমাদ ২২১৪৯)রোজাদার বেহেস্তে প্রবেশ করবে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়েহযরত সাহল ইবনে সাদ রাঃ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদারগণ প্রবেশ করবেন। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগণ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোজাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।(সহীহ মুসলিম ১১৫২)

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাাহ (সাঃ) বলেছেন, রোজা হলো (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) ঢাল ও সুরক্ষিত দূর্গ। (মুসনাদে আহমাদ ৯২২৫)হযরত আব্দুল্লাাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রোজা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। রাসুল (সাঃ) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬)হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারি ২০১৪)হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, শপথ সেই সত্ত্বার যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (সহীহ বুখারি ১৯০৪)হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, নবীজী (সাঃ) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। যখন সে আনন্দিত হবে-এক. ইফতারের সময়। তখন সে ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করবে তখন তার আনন্দ হবে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যখন তার প্রতিপালক রোজার পুরস্কার দিবেন। (সহীহ মুসলিম ১১৫১)হযরত আব্দুল্লাাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ইফতারের সময় রোজাদার যখন দুয়া করেন তখন তার দুয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ দুয়া কুবল কর হয়) (সুনানে ইবনে মাজাই ১৭৫৩)আরও অসংখ্য সহীহ হাদিসে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। রমজান হলো ইবাদতেরমৌসুম। বলা যায়, বসন্ত এসেছে, কেউ কি আছে এতে আমল করবে মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হাদিস ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।

লেখকঃ মো: কামাল উদ্দিন, প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020