ঢাকাশুক্রবার , ৩ জানুয়ারি ২০২৫
  1. অর্থনীতি এবং ব্যবসা বাণিজ্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. ইসলাম
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কলাম
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জবস এন্ড ক্যারিয়ার
  9. জাতীয়
  10. ধর্ম
  11. বাংলাদেশ
  12. বিনোদন
  13. ব্যবসা বাণিজ্য
  14. ব্রেকিং
  15. রাজনীতি

পৌষের শীতে কাঁপছে দেশ

বাংলা ট্রিবিউন
জানুয়ারি ৩, ২০২৫ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

পৌষের হাড় কাঁপানো শীতের দাপটে জুবুথুবু সারাদেশ। শীতের তীব্রতায় কাহিল খেটে খাওয়া মানুষ। উত্তরাঞ্চলে এর তীব্রতা অনেক বেশি। এই শীতের সঙ্গে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। আর এতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উত্তরের হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

অনুভূত হচ্ছে কনকনে শরীর কাঁপানো শীত। তীব্র ঠাণ্ডায় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মধ্যরাত থেকে বেলা ১০টা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে বিভিন্ন এলাকা। গতকাল সারদিনই কুয়াশায় ঢাকা ছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। সারাদিনই সূর্য়ের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার কারণে নৌ-রুটে যান চলাচল বিঘিœত হয়েছে। এমনকি দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে চালকদের গাড়ি চালাতে হয়েছে। রাজধানীর আকাশ সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার পরিমাণ কিছুটা কমলেও বিকাল থেকেই আবার কুয়াশায় ঢাকা পড়ে। রাজধানীতে এতটা কুয়াশা এই প্রথম। ঘন কুয়াশার কারণে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণ এখন খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছেছে। গতকালও রাজধানী ঢাকা ছিল বিশ্বের বায়ূদূষণের শহরের তালিকার শীর্ষে। কুয়াশার কারণে ক্ষতি হচ্ছে কৃষির। বোরো রোপণ করতে পারছে না কৃষক। শীতে বেশি কষ্টে পড়েছেন রিকশা, ঠেলা ও ভ্যানচালক, কুলি, মজুর, নির্মাণ ও ঘাটশ্রমিকসহ হতদরিদ্র শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। তারা কাজে যেতে পারছে না। আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। অনেকে সংসার চালাতে এই হাড় কাঁপানো শীতে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলেও তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ স্বল্পমূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে পুরনো পোশাকের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। শীতে গরিব অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষ প্রচ- কষ্ট ভোগ করলেও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেউ।

সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা হেলিকপ্টারে দিয়ে কয়েকজনকে শীত বস্ত্র দিয়ে লোক দেখানো ফটো সেশন করেছেন। এরপর সরকারের আর কোনো কার্যক্রম নেই। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের প্রচার-প্রচারণার জন্য লোক দেখানো শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কারো কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। এ মাসের শেষার্র্ধ্বজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। চলতি জানুয়ারি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়বে। এ বছর ঘন কুয়াশাটা অনেক বেশি। এর ফলে শীত তীব্র হবে। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও অনুভূতি হতে পারে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। দিনের বেলায় ঠা-া বাতাসের সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বেশি থাকবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র শীত থাকবে। আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দু-একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় দেশের অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র শীতে মানুষের ভোগান্তির তথ্য নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, রাজশাহীতে কমেছে দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। একই সঙ্গে দিনভর বইছে হিমেল হাওয়া। হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কমেছে ১ডিগ্রী। এছাড়া অপবির্তিত রয়েছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কয়েকদিন থেকে রাজশাহীতে ভোর রাত থেকে হিমেল হাওয়া বইছে। দুপুরের দিকে কমলেও বিকেল থেকে বাড়ছে বাতাস। বাতাসের ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে কষ্টের মধ্যে মধ্যবৃত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষদের জীবিকার তাগিদে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হচ্ছে।

রিক্স চালকরা জানান, ভোরের দিকে কুয়াশা থাকছে চারপাশে। সঙ্গে বাতাস বইছে। এছাড়া সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে বেশী বাতাস বইছে। দুইটা প্যান্ট, শরীরে সোয়েটারের উপরে জ্যাকেট পড়েছে। তার পরেও বাতাসে শীরের কাপুনি ধরে যাচ্ছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম পোশাকের দোকানগুলোতে বেড়েছে ভীড়। বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন থেকে তুলনামূলক বিক্রি বেড়েছে।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, পৌষের শেষার্ধে এসে বগুড়ায় তীব্র শীত পড়েছে। গতকাল জেলায় তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বনি¤œ ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। তীব্র শীতে শিশু ও বয়ষ্ক মানুষের শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রিক্সা, অটোরিকশা চালক, দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা নাকাল হয়েছে দারুণভাবে। তবে শীতের কাপড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। ফুটপাতের চায়ের দোকানেও বেড়েছে বিক্রি। নতুন ও পুরাতন শীত বস্ত্র, কম্বল বিক্রেতারা জানিয়েছেন। শীত না পড়লে শীতের কাপড় বিক্রেতাদের ব্যবসায় লস খেতে হয়। বগুড়ার কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করে জানাগেছে, শীত মওশুমের প্রধান ফসল গম, আলু, পেঁয়াজের উৎপাদনের জন্য শীত দরকার। তবে দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ভুক্তভোগী পরিবহন চালকরা জানান, কুয়াশার কারণে রাস্তায় চলার সময় ঘন কুয়াশার কারণে দুই হাত পর পর দেখা যায় না এ কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ধীরগতিতে চলাচল করতে গিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সকালের দিকে কাজের সন্ধানে বের হওয়া নি¤œ আয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। তারা জানান, কাজ না করলে খাওয়া নেই, তাই যত শীত হোক বের হতেই হবে, তবে এখন বাতাস আর কুয়াশা থাকার কারণে কষ্ট হচ্ছে, এখনো কেউ শীত বস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন, নির্মাণ, কৃষি শ্রমিকসহ দিনমজুররা। বিশেষ বেকায়দায় পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষেররা। নদী পেরিয়ে শহরে এসে কাজকর্ম করতে না পারায় অনেকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তাদের। বিএনপির কিছু নেতা ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কিছু কম্বল বিতরণ করলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা কোথাও শীতবস্ত্র বা কম্বল বিতরণ করেছেন এমন কোন খবর মেলেনি। এনজিওগুলোর তৎপরতা চোখে পড়েনি।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। আয় রোজগারে টান পড়েছে। দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব মানুষ এখন চরম বিপাকে পড়েছে। তবে স্বল্প আয়ের এসব শ্রমজীবীদের পাশে নেই কেউ। গত কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। গতকালও দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলেনি। শ্রমজীবীদের কষ্টে পড়তে হয়। শীতে বেশি কষ্টে পড়েছেন রিকশা, ঠেলা ও ভ্যান চালক, কুলি, মজুর, নির্মাণ ও ঘাটশ্রমিকসহ হতদরিদ্র শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। শীতের কারণে আগের মতো কাজও জুটছে না। দিনের বেশির ভাগ সময় বেকার থাকতে হ”েছ। তাতে দেখা দিয়েছে আর্থিক সঙ্কট। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে তারা। শীতের প্রকোপের সাথে বেড়েছে নানা রোগবালাই। অপুষ্টির শিকার এসব কর্মজীবীরা তাতেই কাহিল হয়ে পড়েছেন। অনেক জ্বর, সর্দি, কাশি হাপানিসহ স্বাশকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন। একদিকে আর্থিক সংকট এবং অসু¯’তা অন্যদিকে শীতের দাপট। এতে দিশেহারা অনেকে। শীত মোকাবেলায় নেই গরম কাপড়। যেখানে পরিবারের সদস্যদের পেটের ভাত জুটছে না সেখানে গরম কাপড় কেনা এসব গরীবদের জন্য বিলাসিতা। প্রতিবছর শীতের শুরুতে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সং¯’া এনজিও এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হতো। তবে এবার এমন কিছু নেই। কোন কোন এলাকায় রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিরতণের খবর পাওয়া গেলেও তা অনেকটাই লোক দেখানে। নগরীতে মোট জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এককোটি। এর বিশাল একটি অংশ হতদরিদ্র। নগরীর বস্তিগুলোতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। আছে ঘাটশ্রমিক, কুলি মজুর, নির্মাণ শ্রমিক। নগরীর রিকশা চালকের সংখ্যা দুই লাখের বেশি। আছে হাজার হাজার ঠেলা ও রিকশা ভ্যান চালক। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট ছাড়াও চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জসহ বাণিজ্যিক এলাকা ও সওদাগরী পাড়ায় আছে হাজার হাজার কুলি, মজুর। নির্মাণ কাজে জড়িত শ্রমিকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা এখন কঠিন সময় পার করছে। শীতের কারণে কাজ কমে গেছে। কাজ পেলেও শারীরিক দূর্বলতার কারণে অনেকে কাজ করতে পারছেন না। শীতের এসব মানুষের কর্মক্ষমতা কমে গেছে। তাতে আয় রোজগার বন্ধ। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে দিন। গ্রামীণ জনপদে শ্রমজীবীদের অবস্থা আরো কাহিল।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।