ঢাকাশুক্রবার , ৮ নভেম্বর ২০২৪
  1. অর্থনীতি এবং ব্যবসা বাণিজ্য
  2. আন্তর্জাতিক
  3. ইসলাম
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কলাম
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. জবস এন্ড ক্যারিয়ার
  9. জাতীয়
  10. ধর্ম
  11. বাংলাদেশ
  12. বিনোদন
  13. ব্যবসা বাণিজ্য
  14. ব্রেকিং
  15. রাজনীতি

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ও এক মহানায়কের উত্থানঃ আকতারুল ইসলাম

বাংলা ট্রিবিউন
নভেম্বর ৮, ২০২৪ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

১৯৬৫ সালরে পাক-ভারত যুদ্ধে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত দুঃসাহসিক ভূমকিা পালন করেছিলেন| তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমকিায় সন্তুষ্ট হয়ে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার তাঁকে সিতার-ই-জুরাত ও তামঘা-ই-জুরাত পদকে ভূwষত করেন| জিয়ার এই খেতাবপ্রাপ্তী তাকে পূরো দেশের কাছে খুব বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছিল, এমনটা বলা যাবে না । বরং এই খেতাব তাঁর ব্যক্তগিত আগত হিসেবে থেকে গিয়েছিল বহুকাল| জিয়াউর রহমান তখনো দেশের জনগণের কাছে তেমন পরিচিত ও জনপ্রিয় কোন ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভাব হননি ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ । পশ্চিম পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের ঘৃণ্য হানাদার বাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ প্রদান করে । সারাদেশে শুরু হয়ে যায় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ । পাক হানাদারদের হামলায় পুরো দেশের মানুষ chy©দস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে । এতদিন ধরে যে মানুষগুলো ও তাদের দল দেশের মানুষের মুক্তির প্রতিশ্রুতির কথা বলে গেছেন, সেদিন তারা তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি| কারণ তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে ছিলেন সম্পূণ বেখেয়াল| হয়তো তাঁদের ভূমিকা রাখার ইচ্ছা থাকলেও প্রাণপণ প্রাণ বাঁচানোকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে বিবেচনা করে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন| দেশের প্রধানতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি সাত-ই মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন, স্বেচ্ছায় পাক বাহিনীর হাতে আত্মসgc©b করেন| তাজউদ্দীন আহমদের অনুরোধ স্বত্ত্বেও স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়েই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পাকিস্তানে পাড়ি জমানোকেই অগ্রাধিকার প্রদান করেছিলেন ।

দেশের মানুষকে গণহত্যার সম্মুখীন করে আওয়ামী নেতৃত্বের পলায়ন নীতি আপামর জনতাকে হতবিহ্বল করে তোলে| ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব মানুষ যখন দিকভ্রান্ত ও কিংকতব্যবিমূঢ়, তখন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের উৎসাহে উদ্ভূদ্ধ হয়ে মেজর জিয়া ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভাব হন| তিনি পাক-হানাদারদের বাংলার জমিন থেকে বিতাড়ণের দীপ্ত মন্ত্র জপে রণহুংকার দিয়ে বলেছিলেন, “We Revolt”।

মেজর জিয়া ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রো‡হর ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েন এবং ২৭ মার্চ তৎকালীন প্রধান নেতৃত্বের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন| একজন অকুতোভয়ী মেজরের একটি মাত্র ঘোষণা পুরো জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে উদ্দীপ্ত করে তোলে| সারাদেশের মানুষ পেয়ে যায় কাঙ্খিত পথ-নির্দেশনা| মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ভারতে পলায়নরত আওয়ামী নেতাদের প্রবাসী সরকার গঠণ করতে বাধ্য করে । সেদিন মেজর জিয়াউর রহমানের সাহসিকতার সঙ্গে পুরো আওয়ামী নেতৃত্ব ছোট হয়ে গিয়েছিল, যার খেসারত জিয়া ও তাঁর পরিবারকে আজও দিতে হচ্ছে| ক্ষমতার ছড়ি হাতে পেয়ে আওয়ামীলীগ ও তাদের প্রধান নেতা শেখ হাসিনা মেজর জিয়াউর রহমান-কে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে বারংবার|
যাইহোক, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার কর্তৃক গঠিত ১১টি সেক্টরের মধ্যে মেজর জিয়াউর রহমান ১ নম্বর সেক্টরে বীরত্বপূণ© ভূমিকা পালন করেন এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে রাখেন অসামান্য অবদান| দীঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে জিয়া ফিরে যান তার নিজ Kg©¯’‡j । মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান সারাদেশের গণমানুষের কাছে তাঁকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়|
স্বাধীন দেশে ফিরে এসে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার বশীভূত হয়ে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন| তাঁর প্রায় সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রত্যক্ষ করেন এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক দানবতন্ত্রীয় শাসন ব্যবস্থা| ১৯৭২ সালে ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, ১৯৭৪ সালে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের সীমাহীন লুটপাটের ফলে সংঘটিত দুর্ভিক্ষ এবং অবশেষে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে আপদমস্তক স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত করেন| যার ফল তাঁর এবং তাঁর দলের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে এনেছিল। মুজিবের শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল সবর্স্তরের জনসাধারণ| ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ আর্মির কিছু অকুতোভয়ী বিপ্লবী সেনা সদস্যের হাতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের প্রাণহানী ঘটে এবং বাংলাদেশ একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করে|
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রধান নেতা ও শেখ মুজিবুর রহমানের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর খন্দকার মোশতাক আহমেদ| বলা বাহুল্য মুজিব হত্যায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন। মোশতাক আহমেদ যখন রাষ্ট্রপতি, জিয়াউর রহমান তখন আর্মির প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত| একান্ত অনিচ্ছা স্বত্বেও জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাধারণ সৈনিকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নায়কোচিত ভূমিকার জন্য মোশতাক আহমেদ তাঁকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন| যাইহোক, খন্দকার মোশতাক শাসক হিসেবে মুজিবের দেখানো পথেই হেঁটেছিলেন এবং অতি অল্পসময়ের ব্যবধানে সারা দেশব্যাপী অত্যন্ত অজনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন|
১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ঢাকায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে গেল| ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নির্দেশে সেনাপ্রাধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তাঁর বাসভবনে অন্তরীণ করা হয়| মোশাররফ বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে তাঁকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন এবং ৪ নভেম্বর তাকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান বানানো হয়| ৬ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ মোশতাককে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন|
জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদ মোশারফের শত্রুতার সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই| উচ্চাভিলাসী মোশাররফ জিয়াকে সবসময়ই তার ঘোরতর প্রতিদন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করতেন| জিয়াউর রহমানকে আটক করে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা তার `xN©w`‡bi বৈরী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়| তবে ভাগ্য সেদিন মোশাররফের পক্ষে ছিল না|

দেশের me©ÎB ছড়িয়ে যায় যে, খালেদ মোশাররফ ভারতের পৃষ্টপোষকতায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন| জিয়ার অনুগত সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় পাড়ি জমাতে থাকেন। এদিকে কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীর জুনিয়র ও নন-কমিশন্ড অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে গঠিত বিপ্লবী আর্মি সদস্যদের বিদ্রোহ করার আহ্বান জানান| তাহের জিয়াউর রহমানকে সামনে রেখে অভ্যুত্থান ঘটানোর বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। ৭ নভেম্বর বিপ্লবী সৈনিকেরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে অস্ত্রাগার লুট করে এবং গুলাগুলি শুরু করে দেয়। সবাই সমবেত কন্ঠে শ্লোগান দিতে থাকেন, Ôসিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই এবং সিপাই সিপাই ভাই ভাই, সুবেদারের উপর অফিসার নাই”| ক্যাপ্টেন আসাদ ও ক্যাপ্টেন জলিল মিলে খালেদ মোশাররফ ও বেশ কয়েকজন অফিসারকে গুলি করে হত্যা করেন এবং এর মধ্য দিয়ে খালেদের উচ্চাভিলাসী স্বপ্নের যবনিকাপাত ঘটে|
একদল বিপ্লবী সেনা সদস্য জিয়াউর রহমানরে বাসায় গিয়ে জানান বিপ্লব সফল হয়েছে এবং তিনি মুক্ত| জিয়া বিপ্লবী সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে আনলেন এবং পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখার জন্য সবার সহযোগীতা চাইলেন| রেডিওতে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান সাময়িকভাবে সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং me©kw³ দিয়ে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন| জিয়ার সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত আবেগc~Y© ও সময়োচিত বক্তব্য সারাদেশের গণমানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল| তিনি একাত্তরের যুদ্ধের সময় জনমনে ঠিক একই আশার সঞ্চার করেছিলেন| তবে নভেম্বরের প্রেক্ষাপটটি ছিল ভিন্ন কিছু| তিনি এবার যেন জনগণকে এক অন্য রকমের স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের সুযোগ করে দিলেন|
নভেম্বরের রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের গণমানুষের মাঝে জিয়ার মহাকাব্যিক Avwef©ve ঘটেছিল| নভেম্বরের প্রেক্ষাপট এক মহানায়ককে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল। এই মহানায়কের আগমন ঘটেছিল অনেক আগেই কিন্তু পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতির মূল স্রোতে আনতে যেন একটু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছিল|
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জিয়ার আবির্ভাব এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা| তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং অতি অল্প সময়েই জয় করেছিলেন কোটি মানুষরে হৃদয়| ঠিক জুলিয়াস সিজারের বিখ্যাত সেই উক্তিটির মত, Ôআসলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম| মেজর জিয়াউর রহমানই প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন| বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর নাম আজও ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়ে আছে|

আকতারুল ইসলাম
কবি, গবেষক ও তথ্যবিদ
ই-মেইল: infoscience475@gmail.com

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।