1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণে ইনসাফ ও উদারতা অত্যাবশ্যক। - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ | ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণে ইনসাফ ও উদারতা অত্যাবশ্যক।

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার এমন এক প্রশংসিত গুণ, যা ছাড়া মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নতি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। ইনসাফ না থাকার কারণে মানবজীবনের সর্বস্তরে অন্যায়-অবিচার সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়ায়। মানুষের স্বভাবে স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ, যে কোনো মূল্যে নিজ স্বার্থ হাসিলের প্রবণতা জন্ম নেয়।উদারতা মানবজীবনের একটি মহান শিক্ষা। এর দ্বারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই বজায় থাকে স্থিতিশীলতা ও শান্তি। উদারতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে কোথাও স্বস্তি মিলে না। ইসলাম উদারতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ইনসাফ ও উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে।জনগণের লুণ্ঠিত অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইনসাফের প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আগস্ট,২৪ এর স্বাধীনতা এটাই শিক্ষা দেয়। আসুন জেনে নেই ইসলাম ইনসাফ ও উদারতার ব্যাপারে কি বলে…
মহান আল্লাহ মানুষকে ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসংগত কাজ ও অন্যায় করতে বারণ করেন।’ (সুরা নাহল: আয়াত ৯০)। ‘যখন তোমরা কথা বলো (বিচারক কিংবা সাক্ষী হিসেবে), তখন সুবিচার করো, যদিও সে তোমার আত্মীয় হয়’ (সুরা আনআম: আয়াত ১৫২)। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুল (সা.) কখনো স্বগোত্রীয় মানুষের পক্ষপাতিত্ব কিংবা স্বজনপ্রীতি দেখাননি; বরং প্রতিটি মুহূর্ত নিজের কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে সাহাবাগণের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মাখজুম গোত্রের এক নারী চোরের ঘটনা কুরাইশের ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় আলোচনা হতে লাগলো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম ওসামা বিন জায়েদ (রা.) সুপারিশ করার সাহস করতে পারেন।
সবাই মিলে সুপারিশের জন্য ওসামা (রা.)-কে নির্ণয় করলেন। ওসামা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কথা বললেন। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছো? অতঃপর রাসুল (সা.) খুতবায় বললেন, তোমাদের আগের জাতি এজন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো অভিজাত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করত; তাহলে আমি তাঁর অবশ্যই (দণ্ডবিধি অনুসারে) হাত কেটে দিতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৭)
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইনসাফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হলে হিংসা বৃদ্ধি পায়, অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়ায়, জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। সামাজিক ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ে; সামাজিক ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হয়। চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হলে পরিবারের বড়দের প্রতি ছোটদের মন থেকে সম্মান কমতে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হলে মেধাবীরা ঝড়ে যায়।
রাসুল (সা.) কীভাবে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হয়,তা হাতে কলমে শিখিয়েছেন । তিনি নিজের কারণে কখনো কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি। নিজের কারণে কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ নেননি। কেবল জনগণের জন্যই অপরাধীর উপর দন্ড কার্যকর করেছেন। আমরা যদি রাসুল(সঃ) এর ইসলামী প্রজাতন্ত্র মদীনার দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাই যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত- জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থান। আমরা আজ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। আমরা আজ কাউকে ছাড় দিতে মোটেও প্রস্তুত নই। আমরা সবাই বিজয়ী হওয়ার অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। অন্যেরটা যাই হোক, শুধু আমারটা চাই—এই মানসিকতা কাজ করছে সবার ভেতরে। অন্যের জন্য ভাবনা, কারো জন্য কিছু করার মানসিকতা আমাদের মধ্যে আর সক্রিয় নেই। এজন্য মুসলমানরা আজ দুর্দিনে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এই জাতির হারানো গৌরব ফেরাতে হলে অবশ্যই ইনসাফ ও উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। ক্ষমা, উদারতা, সহিষ্ণুতা এই গুণগুলো মুসলমানদের হারানো সম্পদ। সবাই আন্তরিক হলে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব।মহান আল্লাহ আমাদের সকল কাজে সহায়ক হোক। আমীন।।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন, লেকচারার, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020