1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থা দূরীকরণে করণীয় -মোঃ হাবিবুর রহমান - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থা দূরীকরণে করণীয় -মোঃ হাবিবুর রহমান

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন অতীব জরুরি বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কারণ, শিক্ষা ব্যবস্থার সুচিন্তিত পরিবর্তনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। বিগত সরকার প্রায় পনের বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারকে পরাজিত করে আমরা দ্বিতীয় বারের মত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এ স্বাধীনতার সুফল অনেকাংশেই ম্লান হয়ে যাবে, যদি না দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো না যায়!
প্রথমত আমাদের প্রচলিত শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত যে ধরনের কালো আইন, নিয়ম-নীতি রয়েছে, সবগুলোকে বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে। একজন শিশু যেন দেশপ্রেম, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও যোগ্য মানুষ গড়ে উঠতে পারে, সে বিষয়টিকে মাথায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
একথা ইতিহাস স্বীকৃত যে বাংলা অঞ্চল কখনো আধিপত্যবাদ মেনে নিয়নি। বাংলা অঞ্চল ও বাংলাদেশ আগে থেকেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, সহনশীল সমাজ ব্যবস্থায় এগিয়ে ছিল। প্রাচীন বাংলায় এমন এক উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যার সম্পর্কে ভিন দেশের কবি,দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, গবেষকগণ ভূয়সি প্রশংসা করেছেন। আর্থ-সামাজিক ও বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এ অঞ্চল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে ছিল। বিখ্যাত ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা ও দার্শনিক গুখলে বলেছিলেন, What Bengal thinks today, India thinks tomorrow ।
দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসনের বৃত্ত থেকে জুলাই ও আগস্টে বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৈৗম বাংলাদেশের পুর্নজাগরণ হয়েছে। এ বিপ্লব বেহাত হওয়া থেকে রুখতে হলে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে, বিশেষ করে শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। একটি দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি তার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে।এ শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দেয়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এখন অনেকেই আলোচনা করছেন কীভাবে এ বিষয়গুলো সামাল দেওয়া যাবে? শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সমাজ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ রয়েছে, তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা কেমন ভিসি দেখতে চাই? তার উত্তরে বলা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের পূর্বে তাঁর দেশপ্রেম সবার আগে যাচাই করা প্রয়োজন। কারণ এ নতুন বাংলাদেশে যাতে কোন উপাচার্য ভিন দেশের জাতীয় সংগীতে কন্ঠ না মেলায়। যাতে কোন উপাচার্য অনুমোদনে পুলিশ ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচানে গুলি না চালায়। মূলত একজন ব্যক্তি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করার মধ্য দিয়ে সেই অবস্থানে পৌঁছতে পারেন। উপাচার্য হওয়ার জন্য মূল শর্ত হওয়া উচিত সত্যিকারের দেশ প্রেম, ন্যায়, নিষ্ঠ, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রতিটি ধর্মের প্রতি সহনশীল হওয়া। কাউকে ধর্মীয় কারণে পছন্দমত বিষয়ে ভর্তি হতে না দেওয়া, ধর্মীয় কারণে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত না করা এবং ধর্মীয় কারণে দেশ বিরোধী আখ্যা না দেওয়া। এছাড়াও উপাচার্য হওয়ার জন্য অন্য যে সকল বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো যথাক্রমে পিএইচ.ডি থাকা, স্কলারলি রিসার্চ পেপারের সংখ্যা, সর্বশেষ ৫ বছরে কত সাইটেশন, সর্বশেষ ৫ বছরে নিজস্ব নামে কত সাইটেশন, মোট এইচ- ইনডেক্স কত, কতজন শিক্ষার্থী তাঁর অধীনে পিএইচ.ডি বা এম. ফিল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন এবং কতজন বর্তমানে গবেষণায়রত। সর্বশেষ ৫ বছরে মোট কতটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, কতটি বই (আইএসবিএন) নম্বরসহ প্রকাশিত হয়েছে । বিগত ৫ বছরে শিক্ষার্থীদের তার সম্পর্কে মূল্যায়ন কেমন, এবং একাডেমিক রেস্টাল কেমন। উল্লেখ্য যে, প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ দেশি-বিদেশী নামকরা জার্নাল, এবং প্রিডেটরি কিনা তা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে। এছাড়াও তার একাডেমিক ক্যারিয়ারে কোন নৈতিক পদস্খলন কিংবা শিক্ষার্থীদের কোনভাবে হয়রানি করেছেন কি না তা বিবেচনায় নিতে হবে।
অন্যদিকে গত ১৫ বছরে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের প্রত্যক্ষ কোন সহযোগীতা বা তাদের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা ছিল কিনা তা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। এখানে একাডেমিক রেস্টাল সবার শেষে রাখার হয়েছে এ কারণে যে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এটা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বানানোর জন্য খুব কৌশলে হাতের লেখা সুন্দর, চেহারা দেখে উত্তরপত্রে নম্বর দিয়ে ডিপার্মেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সে সুবিধা নিয়ে আজকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্নপদে বহাল রয়েছেন। শিক্ষা সবার নাগালে রাখতে হলে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকসহ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাথমিক, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও অন্যন্যা সুযোগ সুবিধা পুনরায় চালু বা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং আপামর জনসাধারণ শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় এবং আজকের প্রজন্ম ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য নিজেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করে গড়ে তুলতে পারে।
বিজ্ঞান শিক্ষা,কারিগরি শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যে সকল বিষয়গুলো পড়লে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরি পাওয়া যাবে অথবা গবেষণা ক্ষেত্রে কোন কাজে আসে তা নির্ধারণ করতে হবে। সেকেলে ও অনুৎপাদনশীল বিষয়, যার চাকরির সুযোগ কম, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে অথবা সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে। শিক্ষিত বেকার তৈরির শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে দেশে যে সকল তরুণ বেকার রয়েছেন তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্থায়ী চাকুরী বা পার্ট চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অথবা কেউ যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯স্নাতক ও ¯স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরেও চাকুরি না পায় তার জন্য বিশেষ কোন কোর্স চালু করে চাকুরির ব্যবস্থা বা উদ্যোক্তার হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
এছাড়াও আহমদ ছফা লিখিত গাভী বৃত্তান্ত (২০১৬) এ বর্ণিত শিক্ষক ও উপাচার্যদের নেতিবাচক দিকগুলো আমলে নিয়ে নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ করলে তা দেশের ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভালো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় আজ উপাচার্য বিহীন প্রশাসন অচল অধিকাংশ ব্যক্তি দলীয় মদদে আসীন হয়েছে বিধায় এ শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দলীয়করণের কারণে এ অচলাবস্থা ও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যা আধুনিক বিশ্ব ও উন্নয়নশীল বিশ্বে তা বিরল এবং অবিশ্বাস্য। দেরী হলেও ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অতি দ্রুত অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, ও অন্যান্য পদে প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করা অত্যাবশ্যক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রকাশনা, পাঠদান, পরীক্ষা ও বেতনভাতাদি নিয়ে যাতে নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র, বা অচলাবস্থা সৃষ্টি না হয় তাই দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করা আবশ্যক। কারণ এখনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা ও অংশীজন নানা প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরে এখনো বহাল তবিয়তে আছে। অন্যদিকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‍ডিন কাউন্সিল ও রেজিস্ট্রার উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিষয় মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রেখেছে। কিন্তু ফরর্থ জেনারেশন এবং অধুনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশই উপাচার্য যেহেতু প্রধান কর্মকর্তা, তাই তার অনুমোদন ছাড়াই কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ইচ্ছা করেই করেনি। উপাচার্যগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতা নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। যাতে কোন কাজ তার অনুমতি ও অনুমোদন ব্যতীত সম্পাদন না হয়। তাই শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ এবং মানব সম্পদ গঠনে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল ও বিপ্লবী সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।
লেখক,
মোঃ হাবিবুর রহমান
কবি ও গবেষক, mirmohammadhabib@gmail.com

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020