1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
ছাত্র-জনতার বিপ্লবী ঐক্যই ফ্যাসিবাদ হটাতে ভূমিকা রাখে - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ছাত্র-জনতার বিপ্লবী ঐক্যই ফ্যাসিবাদ হটাতে ভূমিকা রাখে

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪

ফ্যাসিবাদের উত্থান হয় বিকশিত পুঁজিবাদের সংকটের সময়। ফ্যাসিবাদীরা একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় আসে এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে প্রথমেই তারা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে। এতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকা তাদের জন্য সহজ হয়। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এবং বাকি সবাইকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে। পাশাপাশি তারা আয়নাঘর সৃষ্টি, গুম, খুন, অপহরণসহ নিজেদের সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনকে বৈধতা দেয়। ফ্যাসিবাদী শাসকরা স্বেচ্ছাচারিতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে কোনো অন্যায় বলে মনে করে না। এগুলোকে তারা ন্যায়সংগত বলেই মনে করে। ফলে তাদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ জন্মায় না এবং নিজেদের কখনো অপরাধী ভাবে না।
সব ফ্যাসিস্ট শাসকই নিজেকে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে জাহির করেন। দলের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একচ্ছত্র আধিপত্য। দলে তিনি হয়ে ওঠেন এক ও অদ্বিতীয়। দলকে তিনি পরিণত করেন সরকারে আর সরকারকে পরিণত করেন অতিরাষ্ট্রে। তাদের কাজ হলো মতাদর্শের বিরোধীদের দমন করা, প্রয়োজনে একে একে খতম করা।
ফ্যাসিবাদী শাসকরা বরাবরই দেশপ্রেমের কল্পকাহিনি প্রচার করে সর্বগ্রাসী লুটপাটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, বিরোধী মতবাদকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে কারাগারে নির্যাতন করেছে। সেইসঙ্গে বাকি জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়ের সংস্কৃতি জারি রেখেছে। এটাই হলো ফ্যাসিবাদীদের কৌশল। হয় তুমি আমার গুণগান করো, পা চাটো, তেল মারো, উচ্ছিষ্ট ভোগের অংশীদার হও, অন্যথায় তুমি দেশদ্রোহী, রাজাকার, জঙ্গি। স্বৈরাচার হাসিনা মুখে অবিরাম মানবাধিকারের কথা বললেও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক হত্যাকে তিনি বৈধতা দিয়েছেন। তাকে অবহিত করা হয়েছিল ‘মানবতার মা’ হিসেবে। অথচ তিনি ‘আয়নাঘর’ তৈরি করে বহু নিরপরাধ মানুষকে অমানবিক নির্যাতনের নতুন নজির তৈরি করেছেন। গুম করেছেন শত শত মানুষকে, আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছেন দ্বিধাহীনচিত্তে, অভ্যুত্থান দমনে নির্দেশনা দিয়েছেন হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করার।
রাজনৈতিক দলের পক্ষে অনেক সময় ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হয় না। এর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ অর্থাৎ ছাত্র-জনতাই যে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে এর বড় প্রমাণ চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। তবে ফ্যাসিবাদ দমনের সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হলো গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন।প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেক দায়। এ দায় অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে প্রতিহত করে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হলে ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। ছাত্র নেতাদের শক্তি অতি ক্ষণস্থায়ী। তাদের কনস্টিটিউন্সি একটি অল্প দিনের হয়। জায়মান অক্সিজেনের মতো। আমরা জানি ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে যে সকল অগ্রপথিক ছাত্রনেতা ছিলেন যাদের নাম সে সময় জনপ্রিয় বিচিত্রা পত্রিকার প্রচ্ছদে আসে। সে সময়ে বিচিত্রা জনপ্রিয় পত্রিকায় হিসেবে সবার কাছে প্রচলিত ছিল। সে সময় যে নয় জন ছাত্রের কথাই দেশ চলতো। মাত্র তিন থেকে চার মাস যাওয়ার পরেই সেই জনপ্রিয় ছাত্রনেতারা হারিয়ে যান। আমরা চার খলিফার নামও শুনেছি। যারা স্বাধীনতার ৪০ বছরেও রাজনীতিক বে তৈরি করতে পারেনি।
বারবার শুধু ছাত্রদের সামনে এনে জনতা ও রাজপথের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে। তার বড় ভিকটিম এই ছাত্ররাই একসময় হবে। শুধু ছাত্ররাই নয় বরং রাজপথে ছাত্র জনতার বিপ্লবী ঐক্যই স্বৈরাচারের পলায়ন তরান্বিত করে। ছাত্ররা একসময় শক্তিহীন হয়ে পড়বে।ক্ষমতা বিপ্লব কে ধ্বংস করে দিতে পারে। যেমন রুশ বিপ্লব। কেননা লেলিন নিজেই ক্ষমতাকে কিভাবে ডিল করবেন এবং, জনগণকে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত করাবেন তা, বুঝতে পারেন নাই। লেলিন ক্ষমতায় এসে অ-জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। সে সময় তিনি শুধু নিজে একাই অ-জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বিষয়টা তা নয়। তার দলও জনপ্রিয়তা হারায়। তার বিপ্লব বেশিদিন টিকেনি। কারণ তিনি বিপ্লবের কিছুদিন পর সকলের সাথে সংলাপ ছাড়া নির্বাচন দেন। ফলে বিরোধীদল ৪০% ভোট পায় এবং লেনিনের দল ২৫% ভোট পেয়ে পরাজিত হয়। আর এই পরাজয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ওয়ান পার্টি স্টেটে পরিণত হয়। পরবর্তীতে লিলিনের দল আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ক্ষমতা জনতার সাথে অনেক দূরত্ব তৈরি করে।
ক্ষমতা মানুষকে আপামর জনসাধারণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ইরান ও কিউবায় বিপ্লবের পর সেই সময়কার বিপ্লবী সরকার ক্ষমতা ও জনতার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করতে পেরেছিলো। সেজন্যই তারা বিপ্লবের পরেও তাদের বিপ্লব টিকে ছিল। যখন কোনো অরাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ দ্বারা বিপ্লবের পরবর্তী সরকার গঠন করে তখন ফ্যাসিবাদ সক্রিয় থাকে। আর বিপ্লব ম্লান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ সেই সুশীলরা (অরাজনৈতিক ব্যাক্তি) ফ্যাসিবাদী দোসরদের সহজে চিহ্নিত করতে পারে না এবং প্রশাসন সহজে ঢেলে সাজাতে পারেনা বলেই বিপ্লব ম্লান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রশাসনে থাকা ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীরা এ বিপ্লবকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। সুবিধাভোগীরা সাধারণত কোন বিপ্লবের মূল্য যথাযথ দিতে পারে না। সেক্ষেত্রে বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব ব্যক্তিদেরকে সামনে এনে মূল্যায়ন করতে হবে এবং সকল সুস্থ ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে জনগনের সরকারের কাছে যৌক্তিক সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে বিপ্লব দীর্ঘদিন থাকবে।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন,রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেকচারার,আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020