1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
জালিমের অন্যায়গুলো স্বীকার না করাও এক প্রকার জুলুম - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ | ১:০১ পূর্বাহ্ণ

জালিমের অন্যায়গুলো স্বীকার না করাও এক প্রকার জুলুম

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, আগস্ট ১৬, ২০২৪

জুলুম একটি মহাপাপ। একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ। যার গন্তব্য হলো জাহান্নাম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৃথিবীজুড়ে চলছে আজ জুলুমের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। চারদিকে প্রকাশ পাচ্ছে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র আজ এই জুলুমে লিপ্ত। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম।বিনা ভোটে ক্ষমতা গ্রহণ, কাউকে হত্যা করে তাঁর পরিবারকে চাকুরি বা অর্থ দিয়ে মায়াকান্না করা, কারও অধিকার হরণ করে মিথ্যা অভিনয় করা, বিনা অপরাধে জেল, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে কোন আলোচনা শুরু করা, ইত্যাদি কাজ জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের প্রতি জুলুম সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তায়ালার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তায়ালা মাজলুমের দোয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন।
দুনিয়াতে খুব কম জালিমই নিজেকে জালিম মনে করে। আবার জালিম যখন মাজলুম এবং দুর্বলের প্রতি অত্যাচার চালায়, তখন সে নিজেকে মনে করে অনেক ক্ষমতাবান।সে মনে করে তার শক্তি ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী। মনে করে তার সহযোগী অনেক। কিন্তু সে ভুলে যায়, ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও মহান আল্লাহ তার সঙ্গে আছেন। আজ যে জালিম নিজেকে শক্তিশালী অনুভব করে এবং শক্তির দাপটে দুর্বলের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, কাল কেয়ামতের দিন সে নিজেকে মারাত্মক দুর্বল ও দরিদ্র অনুভব করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জালিমদের কোনো বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে। (সূরা মুমিন, আয়াত : ১৮)।
সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যেদিন জালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দেব এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। (তখন তাদের বলা হবে,) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই? (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪২-৪৪)। এভাবে কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে, যাতে জালিমের কঠিন শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ জালিমকে ছাড় দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
মাজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ জালিমের পতনের অন্যতম কারণ। রাসূল (সা.) বলেন,তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মাজলুমের দোয়া। আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি: ৩৫৯৮)। যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি। তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছে। স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং তার পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সব নবজাতক ছেলে সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা নিজেদের সর্ব ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিল।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। মূসা তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা ভূমিতে দম্ভ করল। তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ। কাউকে আমি ধসিয়ে দিয়েছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি; তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। …আমি মানুষের কল্যাণার্থে এসব দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকি, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই কেবল তা বোঝে। (সূরা আনকাবুত আয়াত : ৩৯-৪০, ৪৩)।
আরও এরশাদ হয়েছে, ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় আর অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে! (সূরা কাসাস, আয়াত : ৩৯-৪০)।
আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি মাফ না করেন। মুমিনের উচিত কারো ওপর জুলুম হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকা। কোনো জালিমকে জুলুমের কাজে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকা। যারা তা করবে, তাদের সঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং তাদের হাউসে কাওসার থেকে বঞ্চিত করা হবে। কাআব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা বলেছেন, হে কা’আব ইবনে উজরা, আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (অনিষ্ট) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তাআলার সহায়তা প্রার্থনা করি। যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করল), তাদের মিথ্যাকে সত্য বলল এবং তাদের স্বৈরাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করল, আমার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। যার সুপারিশ ছাড়া কিয়ামতের মাঠে গোটা মানবজাতি অসহায় হয়ে পড়বে, সেই রাসুল (সা.) যদি কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন, তাহলে তার চেয়ে মন্দ কপাল আর কে হতে পারে? অতএব, দুনিয়ার হীন স্বার্থে জালিমের অসংলগ্ন কাজকে সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। তাদের থেকে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ জুলুমে সহযোগিতা করাও জঘন্য গুনাহ। মহান আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মার সবাইকে রক্ষা করুন।আমীন।।
লেখকঃ কামাল ইবনে ইউসুফ, লেকচারার,আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020