চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে টেকনাফের সেন্টমার্টিন এলাকায় বাংলাদেশি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি এবং মিয়ানমার নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে, বেড়েছে উদ্বেগ। ওই এলাকার সীমান্তের নিরাপত্তায় দুদেশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এখন প্রকট।
সরকারের পক্ষ থেকে শনিবার (১৫ জুন) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা আক্রমণ করব না, তবে আক্রান্ত হলে ছেড়ে দেব না। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে।’ অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, ‘সরকারের ব্যর্থতায় আমরা আমাদের দ্বীপে যেতে পারছি না। সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকটে সরকারের আচরণ দাসসুলভ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।’ আর সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বহিঃশত্রুর যেকোনো আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা রয়েছে।’
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন মিয়ানমারে অস্থিরতার কারণে সেন্টমার্টিন ঘিরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণের বিষয়টি খুবই জটিল। বিদ্যমান পরিস্থিতি সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব হারাতে পারে।
সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শনিবার দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে শেখ রাসেল সেনানিবাসে একটি ব্রিগেড সিগন্যাল কোম্পানির পতাকা উত্তোলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে যে সহিংসতা হচ্ছে, তার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড আছে। তারা বিষয়টা তদারকি করছে। আমরা সেনাবাহিনীও প্রস্তুত আছি। পরিস্থিতি খারাপ হলে বা অন্যদিকে গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় কারো সাথে ঝগড়া করতে চাই না। কিন্ত কেউ যদি আমাদের সাথে অযথা বিবাদ সৃষ্টি করতে আসে সেক্ষেত্রে আমরা বসে থাকবো না।
টেকনাফের সেন্টমার্টিন উপকূলে মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি ও জাহাজ থেকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশীদের ট্রলার লক্ষ্য করেও ইতিমধ্যে মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। জান্তা বাহিনীর এইসব অশুভ সামরিক তৎপরতা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। মিয়ানমারের ধারাবাহিক উসকানির মুখে সরকারের নির্বিকার আচরণ বিস্ময়কর।জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন স্থানে বঙ্গোপসাগরের মাঝে দুটি স্থানে বালুচর জেগে ওঠে। এই দুটো বালুচরের কারণে ভাটার সময়ে সেন্টমার্টিনে চলাচল করা যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো সাগরের ভেতর মিয়ানমারের একটি অংশ ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বাংলাদেশের বিজিবির সমন্বয়ের কারণে এই চলাচলে এর আগে কখনো কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি। তবে সম্প্রতি আরাকান আর্মি মিয়ানমারের এই অঞ্চল দখল করে নেওয়ার কারণে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার ও নৌযানগুলোকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি গুলি ছুড়ছে।