তারা পেশাদার চোর। চুরির অর্ধেক টাকা ব্যয় করেন মামলা মোকদ্দমায়। বাকি টাকায় তাদের সংসার চলে। গত সাত বছরে ২০০টি চুরি করেছে এ চোর চক্রের সদস্যরা। নগরীতে নগদ ১৮ লাখ টাকা ও ২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় ওই চোর চক্রের দুইজনকে গ্রেফতারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার এমন তথ্য জানায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুরি করা টাকার একাংশ দিয়ে আগের মামলার খরচ চালান তারা। আরেক অংশ নিজেরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেন। মঙ্গলবার থেকে ঢাকা এবং কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় টানা ৩০ ঘণ্টার অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর-পশ্চিম) উপ-কমিশনার মো. আলী হোসেন। ওই দুইজন হলেন- নুরনবী সাকিব (২৩) ও আশিকুর রহমান (২৫)। গত ১৩ মে হজে যাওয়ার জন্য জসিম উদ্দিন ও রোজিনা আক্তার নামে এক দম্পতির জমানো ১৮ লাখ টাকা ও ২৩ ভরি স্বর্ণ ঘরের জানালার গ্রিল কেটে নিয়ে যায় চোরচক্র। ১২ মে ছোট ছেলের কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পরিবারসহ ঢাকায় যান তারা। বাড়িতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী বড় ছেলে ছিল। কিন্তু রাতে পড়ালেখা করে সে দাদা-দাদির সঙ্গে নিচতলায় ঘুমাতে গেলে সে সুযোগে তিনতলার বাসা ফাঁকা পেয়ে ঘরে থাকা সমস্ত টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় চোরচক্র। এ বিষয়ে ১৪ মে রাতে ডবলমুরিং থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন জসিম উদ্দিন গতকাল নগরীর মনসুরাবাদে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার আলী হোসেন জানান, গত ১৪ মে চুরির ঘটনায় জড়িত রাতুল নামে এক চোর অন্য এক মামলায় সদরঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে সে ডবলমুরিং থানায় সংঘটিত চুরির সঙ্গে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদে চুরির কথা স্বীকারও করে এবং তার কাছ থেকে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুসারে সালাউদ্দিন নামে আরেক চোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সাকিব ও আশিকের নাম পাওয়া যায়। আলী হোসেন বলেন, তাদের দুইজনের কাছ থেকে সাড়ে ছয় ভরি করে দুইটি স্বর্ণের হার ও একটি আংটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আশিকের শাশুড়ির কাছ থেকে ৫০ হাজার ও সাকিবের মায়ের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। সাকিব এই চোর চক্রের প্রধান। সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। ১২ বছর বয়সেই সাকিব চুরির মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। ১৬ বছর বয়সেই হয়ে যায় দুর্ধর্ষ চোর। গড়ে তোলে নিজের গ্রæপ। এরপর সাত বছরে ১৫০ থেকে ২০০ চুরির ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় সে। তাকে ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলেও জানান ওই ডিবি কর্মকর্তা।
নগরীর আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, সদরঘাট ও বন্দর এলাকায় চুরির ঘটনায় বেশিরভাগই তারা জড়িত। তারা একেকজন আট থেকে নয়বার গ্রেফতার হয়েছে। জামিন নিয়ে বের হয়ে আবার তারা চুরি করে। চুরির টাকায় তারা আগের মামলার খরচ চালায়। একেকটি এলাকায় কয়েকটি চোর চক্র থাকে। চুরি করা টাকার ভাগ তাদেরকেও দিতে হয়। চুরি হওয়া ১৮ লাখ টাকাও এসব চক্রকে দিতে হয়েছে। কিছু টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার রাতুল ও সালাউদ্দিনের কাছে আছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তবে তারা এখন কারাগারে। চুরির ঘটনায় জড়িত এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।