বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা প্রয়োজন

বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা প্রয়োজন

পৃথিবীতে যতগুলো দেশ আছে তার মধ্যে অপার সম্ভাবনাময় এক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশটি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশটি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সুনাম ছড়াচ্ছে। দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা, তথ্য ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে যে অগ্রগতি লাভ করেছে তা চোখে পড়ার মতো। এই উন্নয়ন বা অগ্রগতি প্রতিটি নাগরিকের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। এই উন্নয়নের ধারা আগামীতেও বজায় রাখতে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নে প্রতিটি নাগরিককে অবদান রাখতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার দেশে সম্পদ আছে আর সেই সম্পদ হলো আমার দেশের মানুষ।’ আমাদের দেশে এত জনবল থেকেও তাদেরকে ঠিকমতো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এর কারণ হলো, দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এই সংখ্যাকে মোটেও সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। দক্ষ জনশক্তি একটি দেশের জন্য যেমন আশীর্বাদ, তেমনি বেকার জনগোষ্ঠী দেশের জন্য অভিশাপ। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত এই বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। চাইলেই কেউ বেকার থাকতে পারবে না—এমন নীতিতে আসতে হবে। আমাদের দেশে যত বেকার আছে, তার সিংহ ভাগই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করা, অর্থাৎ এই বেকারত্বের প্রবণতা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেশি, অথচ এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে চালকের আসনে থাকার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এই বেকারত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেকে পরাজিত হয়ে শেষমেশ আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নিজের লক্ষ্য ও পরিবারের প্রত্যাশা কোনোটাই যখন পূরণ হয় না, তখনই এসব খারাপ চিন্তা তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ কাউকে দেওয়া উচিত নয়।

২০২৬ সালে আমাদের দেশটি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ভুলে সেই লক্ষ্য অর্জন করা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে আপাতত নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কোভিডের সময়টাতে পুরো পৃথিবীকে নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে। সেই সময়ে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন আবার প্রতি বছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। ফলে চাকরির বাজার হয়ে পড়ছে তুমুল প্রতিযোগিতার এক মঞ্চ। এখানে প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়লেও শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে না। সুতরাং শূন্য পদে চাকরি পাচ্ছে সীমিত সংখ্যক, কিন্তু বাকিদের তো বেকার থাকতে হচ্ছে। এভাবেই মূলত বেকারের সংখ্যাটা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধান করতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় এখন আইটি ফার্ম তৈরি করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। বর্তমান যুগ যেহেতু তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ, তাই এখানেও অনেকে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশে যেমন দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আসল উদ্দেশ্যও অনেকটা সফল হবে।

লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন,প্রভাষক, আতাকরা কলেজ,কুমিল্লা।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *