অযোগ্যের হাতে দায়িত্ব দেওয়া বড় খেয়ানত

অযোগ্যের হাতে দায়িত্ব দেওয়া বড় খেয়ানত

মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আমানত। যা ছাড়া ঈমানই পূর্ণ হয় না। রাসুল(সা) বলেছেন- যার মধ্যে আমানত নেই তার ঈমান নেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৩৮৩। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৯৫৬। ঈমানের অপরিহার্য দাবি- আমানত ও বিশ্বস্ততা। ঈমানদার হবে আমীন ও বিশ্বস্ত, নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন। যার ভেতর ও বাহির অভিন্ন। খেয়ানতকে হাদীসে মুনাফেকের নিদর্শন বলা হয়েছে। আমানত ও খেয়ানতের বিষয়টি ইসলামে অনেক বিস্তৃত। মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-প্রতিভা সবই আল্লাহর অনন্য দান ও আমানত। তাই সুস্থ ও স্বচ্ছ বিবেকের দাবি- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে সমর্পিত হওয়া।যোগ্য লোকের নিপুণ হাত ছাড়া কোনো কাজই সুন্দর ও সুচারু হয় না। অতএব যে কোনো কাজের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্য, দক্ষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত। দুর্বল বা অযোগ্য ব্যক্তির কাঁধে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সকলেরই ক্ষতি। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু যর রা. বলেন, একদিন আমি রাসুল(সা)-কে বলেছিলাম, আপনি কি আমাকে প্রাদেশিক গভর্নর বানাবেন? তখন নবীজী হাত দিয়ে আমার বুকে একটা (মৃদু) থাপ্পড় দিয়ে বললেন- আবু যর! তুমি দুর্বল আর এটি আমানত। কিয়ামতের দিন এটি মানুষের লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। হাঁ, দায়িত্বটাকে যে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং অর্পিত দায়িত্বের হক যথাযথ আদায় করবে সে বেঁচে যাবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮২৫। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৩২০৭। ইমাম নববী রাহ. বলেন, দায়িত্বের আকাঙ্ক্ষা থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটি অনেক বড় মূলনীতি।
বিশেষত দায়িত্ব আদায়ে যাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে, তাদের জন্য রয়েছে এখানে অনেক শিক্ষা। দায়িত্ব গ্রহণ বা প্রদান হালকা কোনো বিষয় নয়। অযোগ্যের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া অনেক বড় খেয়ানত। নবীজী বলেছেন, এটি কিয়ামতেরও আলামত। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল(সা)কে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন এক গ্রাম্যলোক এসে প্রশ্ন করল, কিয়ামত কবে?রাসুল(সা)তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেন। এতে উপস্থিত অনেকের ধারণা হয়েছিল, নবীজী তার প্রশ্ন শুনেও জবাব দেননি। কারণ অপছন্দ করেছেন। আবার কারো কারো মনে হয়েছিল, নবীজী সম্ভবত তার কথা শুনতেই পাননি! আলোচনা শেষ হওয়ার পর রাসুল(সা) খোঁজ করলেন- কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়?
লোকটি বলল, এই যে আমি! তখন রাসুল(সা) বললেন, আমানত যখন নষ্ট হওয়া শুরু হবে তখনই কিয়ামতের অপেক্ষা করো! লোকটি বলল, আমানত আবার নষ্ট হয় কীভাবে? রাসুল(সা) বললেন- অযোগ্য ব্যক্তির কাছে যখন দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হবে তখনই কিয়ামতের অপেক্ষা কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯; শরহুস সুন্নাহ, বাগাভী, হাদীস ৪২৩২। জীবন চলার পথে সুখে-দুঃখে ও বিভিন্ন প্রয়োজনে একে-অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। অনেক সময় পরামর্শেরও প্রয়োজন হয়। দেখা যায়, সময়মতো সুন্দর একটি পরামর্শের দাম লাখ টাকার চেয়েও বেশি। তেমনি একটি ভুল পরামর্শ ডেকে আনতে পারে বিরাট ক্ষতি। কাজেই পরামর্শদাতাকে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা) বলেন- যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিল, অথচ সে জানে কল্যাণ এর বিপরীতে, তবে সে তার সঙ্গে খেয়ানত করল। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৫৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫০।
আবু হুরায়রা রা. নবীজী থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন- যার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয় সে আমানতদার। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৬৯,আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ২৫৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১২৮। হযরত মাওলানা মনযুর নুমানী রাহ. বলেন- যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় পরামর্শ গ্রহণকারী তাকে নির্ভরযোগ্য মনে করেই তো তার কাছে যায়। নিজের একটি আমানত তার কাছে সোপর্দ করে। অতএব তার উচিত, আমানতের হক আদায়ে ত্রুটি না করা। অর্থাৎ ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করেই তাকে কল্যাণমূলক পরামর্শ দেওয়া এবং বিষয়টির গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করা। অন্যথায় সে এক ধরনের খেয়ানতের অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। -মাআরিফুল হাদীস ২/১৫১।
খেয়ানতকারীর সঙ্গেও খেয়ানতসূলভ কাজ করা যাবে না। খেয়ানতের জবাব খেয়ানত দেয়ে দিব না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা) ইরশাদ করেন- তোমার কাছে আমানত রেখেছে তার আমানত আদায় করে দাও! যে তোমার সঙ্গে খেয়ানত করেছে তার সঙ্গেও খেয়ানত করো না! -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৬৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৩৫। আসুন, সব ধরনের খেয়ানত থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুক।আমিন।।

লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন,লেকচারার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *