1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
যিলকদ মাস আশহুরে হুরুমের একটি - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ | ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

যিলকদ মাস আশহুরে হুরুমের একটি

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, মে ১৫, ২০২৪

যখন কোনো সময়কে অন্য সময়ের তুলনায় কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়, এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, সময়টিতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা। খুব সতর্কতার সাথে গোনাহ থেকে দূরে থাকা।
এসব যদিও সবসময়েরই কাজ, তবু ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনীতে আরো বেশি যত্ন নেওয়া উচিত। আশহুরে হুরুম তথা যিলকদসহ চারটি সম্মানিত মাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- বার মাসের মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬
আয়াতে আশহুরে হুরুমে নিজের প্রতি জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। জুলুমের মানে কী? আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম রাহ. বলেন- জুলুম হল, আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়া এবং তাঁর হুকুম না মানা। -তাফসীরে তবারী ১১/৪৪৩; তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ৬/১৭৯২
এই জুলুম তথা আল্লাহর আনুগত্য বর্জন করা এবং তাঁর অবাধ্যতায় জড়িত হওয়া তো সবসময়ই নিষিদ্ধ। আশহুরে হুরুমে জুলুম নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হল, এইসব মাসে জুলুম করা বেশি ভয়াবহ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সারা বছরের কোনো মাসেই জুলুম করবে না। তবে-বার মাস থেকে চার মাসকে বিশেষভাবে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন, এগুলোর সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই এই মাসসমূহের গোনাহ বেশি ভয়ানক এবং এর নেক আমল ও নেক আমলের সওয়াবও অধিক। -তাফসীরে ইবনে জারীর ১১/৪৪৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৩০
কাতাদা রাহ. বলেন- আশহুরে হুরুমে জুলুম করা অন্যান্য সময়ের জুলুম থেকে অধিক গুরুতর। যদিও জুলুম সব সময়ই গুরুতর। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যে বিষয়কে চান, মহৎ ও গুরুতর বানিয়ে দেন। -তাফসীরে তবারী ১১/৪৪৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৩১।
অতএব যিলকদ মাস ও অন্যান্য সম্মানিত মাসের আমল হল, কোনো অন্যায়-অবিচার ও গোনাহ না করা এবং ফরয আমলসহ অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া।যিলকদ মাসের বিশেষ একটি আমল হল, রোযা রাখা। মুজীবা আলবাহেলীয়্যা তার পিতা বা চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন। (কিছুদিন থাকেন।) এরপর চলে যান। এক বছর পর আবার আসেন। এতদিনে অধিক রোযা রাখার দরুন তার স্বাস্থ্য ও চেহারা-সূরত পাল্টে গেছে। তিনি বললেন-
يَا رَسُولَ اللهِ، أَمَا تَعْرِفُنِي. ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কি চেনেননি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- وَمَنْ أَنْت؟ তুমি কে? আরয করলাম- أَنَا الْبَاهِلِيّ، الّذِي جِئْتُكَ عَامَ الْأَوّلِ.আমি হলাম বাহেলী, গত বছর এসেছিলাম। জিজ্ঞেস করলেন- فَمَا غَيّرَكَ، وَقَدْ كُنْت حَسَنَ الْهَيْئَةِ؟ তোমার এ অবস্থা হল কী করে? তোমার চেহারা-সূরত তো আরো ভালো ছিল! জবাব দিলাম- مَا أَكَلْتُ طَعَامًا إِلّا بِلَيْلٍ مُنْذُ فَارَقْتُكَ আপনার নিকট থেকে যাওয়ার পর রাতে ছাড়া কোনো খাবার খাইনি। (অর্থাৎ পুরো বছর রোযা রেখেছি।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
لِمَ عَذّبْتَ نَفْسَكَ. নিজেকে এত শাস্তি দিলে কেন? এরপর নবীজী বললেন- صُمْ شَهْرَ الصّبْرِ، وَيَوْمًا مِنْ كُلِّ شَهْرٍ. তুমি ছবরের মাসে (রমযানে) রোযা রাখো। এরপর প্রতি মাসে একটি করে রোযা রাখো। আরয করলাম- زِدْنِي فَإِنّ بِي قُوّةً. আমাকে আরো বেশি রোযা রাখার অনুমতি দিন। আমার আরো রোযা রাখার সামর্থ্য আছে। তিনি বললেন- صُمْ يَوْمَيْنِ. তাহলে প্রতি মাসে দুইটি করে রোযা রাখো। বললাম-
زِدْنِي আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বললেন- صُمْ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ তাহলে প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখো। আমি বললাম- زِدْنِي আরো বাড়িয়ে দিন। তখন তিনি বললেন-
صُمْ مِنَ الحُرُمِ وَاتْرُكْ، صُمْ مِنَ الحُرُمِ وَاتْرُكْ، صُمْ مِنَ الحُرُمِ وَاتْرُكْ، وَقَال بِأَصَابِعِهِ الثّلَاثَةِ فَضَمّهَا ثُمّ أَرْسَلَهَا. আশহুরে হুরুমে রোযা রাখো এবং বিরতি দাও, আশহুরে হুরুমে রোযা রাখো এবং বিরতি দাও, আশহুরে হুরুমে রোযা রাখ এবং বিরতি দাও।
একথা বলার সময় হাতের তিন অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেছেন। আঙ্গুল তিনটিকে বন্ধ করেছেন, এরপর ছেড়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৩২৩; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ২৭৫৬। ‘আশহুরে হুরুম’ হল উপরে উল্লিখিত সম্মানিত চার মাস। আর তিন আঙ্গুল খুলে ও বন্ধ করে নবীজী বুঝিয়েছেন, তিন দিন রোযা রাখো, তিন দিন রোযা ছাড়ো। এভাবে তিন দিন পরপর তিনটি করে রোযা রাখো। হাদীসটি থেকে বুঝে আসে আশহুরে হুরুমে রোযা রাখা একটি উত্তম আমল। হাফেয ইবনে হাজার রাহ. হাদীসটি দিয়ে রজব মাসের কিছুদিন রোযা রাখা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল দিয়েছেন। কেননা, আশহুরে হুরুমের মধ্যে রজব মাসও রয়েছে। তিনি বলেন-
এই হাদীসে যদিও একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী আছে, তবু হাদীসটি থেকে বোঝা যায়, রজব মাসের কিছু দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা রজব মাস আশহুরে হুরুমের একটি। তদ্রূপ যিলকদ মাসও যেহেতু আশহুরে হুরুমের একটি; বরং সম্মাতিন চার মাসের প্রথম মাস। সুতরাং এ মাসেও কিছু রোযা রাখা ভালো। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কিছু রোযা রাখার তাওফীক দান করুন- আমীন।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন, লেকচারার,ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020