1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
হুরে জান্নাত শিখা রচিত “ফিরে যাও নিঃস্ব সময়” এর কাব্য পর্যালোচনা- মোঃহাবিবুর রহমান - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ | ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

হুরে জান্নাত শিখা রচিত “ফিরে যাও নিঃস্ব সময়” এর কাব্য পর্যালোচনা- মোঃহাবিবুর রহমান

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, মে ১১, ২০২৪

কবি হুরে জান্নাত শিখা রচিত “ফিরে যাও নিঃস্ব সময়” সময়োচিত ও প্রাসঙ্গিক বাংলা ভাষায় লিখিত একটি কাব্যগ্রন্থ। এটি পাঠক সমাবেশ (ঢাকা) নামক প্রকাশনা থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পরিবেশন ও মূদ্রণ করা হয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থে (আইএসবিএন: ৯৭৮৯৮৪৮১২৫১১৩) নগর ও পল্লীর বাস্তবিক চালচিত্র অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে চিত্রিত হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৩৮টি কবিতা রয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থটি গদ্য ছন্দে লিখিত। ‘কবিতাগুলোর মধ্যে শিরোনামহীন’ (২০১৭) হল তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। কবিহুরে জান্নাতের কাব্যরীতিতে কখনো কখনো জীবনানন্দ দাশের কাব্য ও নানান ছন্দ রীতি প্রতিফলিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে নিম্নোক্ত পঙ্ক্তিগুলোর অবতারণা করা যায় “বহুকাল আগে জলাশয় ছিল বুঝি এইখানে!/জলদাগ কাটে না, জল দাগ কেটে গেছে,/একাকী পড়ে আছে ও জলছাপ” . . .।

কবি যেহেতু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ও কাউন্সিলর,এই কাব্যগ্রন্থের কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতায় তাঁর তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সামাজিক ও কাল্পনিক চালচিত্র স্বাভাবিকভাবেই ফুটে উঠেছে। যেমন তিনি নিঃস্ব সময় কবিতায় লিখেছেন-“দারুণ স্থবিরতা গ্রাস করে নেয়/কলমের কালি, কবিতার খাতা/লেখবার অক্ষর, মগজের স্নায়ুকোষ।………ডায়েরির পৃষ্ঠা, খরাক্রান্ত মনন/ভাবনার লাশের ওপর হেঁটে যায়/পিঁপড়ের দল মুখে করে নিঃস্ব সময়”. . .।
কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন মহা পৃথিবী’র ‘আট বছর আগে একদিন’ কবিতায় নানান চমকপ্রদ রূপক ও উপমা ব্যবহার করেছেন, কবি হুরে জান্নাত শিখা তার বিভিন্ন কবিতায় রূপক ও উপমার নানান উদাহরণ শৈল্পিক ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। “এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!/রক্তফেনা মাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি/আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার /কোনোদিন জাগিবে না আর।” . . . –জীবনানন্দ দাশ।
কবি হুরে জান্নাত শিখা বলছেন একটু ভিন্ন কথা উপমার পসরা সাজিয়ে, “এ ভরা জোছনার রাতে/পথের কুকুরগুলো বড্ড মোলায়েম শুয়ে আছে/আদিম এক অনুভব নিয়ে/কেউ শিস দিয়ে গেছে কৃষ্ণের বাঁশির মতো/জানালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে/দেবেই তো, কে না বোঝে/জোছনার রাতে/আদিম অনুভবসব সুর হয়ে বাজে।” . . . ।
অন্যদিকে অত্র কাব্যগ্রন্থে গ্রামীণ জন জীবনের গল্পগুলো কবির ব্যবহৃত শব্দে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বিস্মৃতি কবিতায় উল্লেখ করেছেন। “তারপর চলে গেছে বহুকাল/যেখানে বাঁশঝাড় ছিল/সেখানে এখন বসেছে ধানভাঙা কল/মুদি, মনিহারী, বালিশ তোষক/এবং যথারীতি মাছের বাজার।”
এছাড়াও এ কাব্যগ্রন্থে কবি শহরের বাস্তব চিত্র ও জনতার কোলাহলকে তুলে এনেছেন অনবদ্য কাব্যিক ভঙ্গিমায়। যেমন, ”কিছুদিন এখানেই বাঁচতে চাই সজ্ঞানে/আমার পরিপাটি শাড়ির ভাঁজে/হুড ফেলা রিক্সায়/এই কোলাহলময় শহুরের পথে/সকালের উদ্ভাসিত রোদের ভেতর/মধ্যাহ্নের ক্লান্ত অবসরে/আমার সমূহে বর্তমানে।”
অন্যদিকে এই কাব্যগ্রন্থে একজন সাধারণ কবির আর্থিক চালচিত্র ও খ্যাতিমান কবিদের তুলনামূলক বর্ণনা উঠে এসেছেকাব্য কথার পরতে পরতে। “মানুষ দরিদ্র নয়/কবিতাই মানুষকে বড় দরিদ্র করে রাখে/কবি সুলভ নিঃস্বতায় জীবনানন্দের সাথে/রবীন্দ্রনাথের ফারাক থাকে না কোন/বরং দরিদ্র হয়ে বাঁচে কবি হয়ে নয়।”
এ কাব্যগ্রন্থে ব্যবহৃত নানান রূপক ও উপমা পাঠককে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে রাখবে। কবি তাঁর কবিতায় পিঁপড়ে সহ নানান প্রাণীর উপমা ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও আমি, আমার নানান সর্বনাম পদ ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তাঁর কবিতায় প্রীতি ও অনুরাগ এবং রোমান্টিকতা, মানব সমাজের আবেগের নানান চিত্র প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এছাড়াও এ কাব্যগ্রন্থে নিমোক্ত বিষয়াবলী যেমন অপেক্ষা, পৃথিবী, মুক্তি, সময়, কবি, কথা, কাল, অক্ষমতা, সক্ষমতা, স্বর্গ, সামাজিক চিত্র, কবিতা, স্মৃতি, নীরবতা, স্টেশন, শেকল, ঔদ্ধত্য, ভালোবাসার অস্তিত্ববাদ, প্রত্যাবর্তন, নিয়তি, বিস্মৃতি ইত্যাদি বিবিধ বিষয়াবলী কবি তাঁর কাব্যিক আবেগ ও অনুভূতি এই কাব্যগ্রন্থে অত্যন্ত সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন।
কাব্য পর্যালোচক: মো: হাবিবুর রহমান, লেখক, কবি ও গবেষক,
ই-মেইল: habibpacs@gmail.com

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020