পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এই ঘোরার সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে সামান্য হেলে থাকে। পৃথিবী আবার তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনো সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনো উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সেই অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো ও তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে। অসহ্যকর এ গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বাসাবাড়ি থেকে মানুষ বের হতে পারছে না, বেরিয়ে এলেও গরম আর পিছু ছাড়ছে না। যেনো প্রকৃতিটাও গরম হয়ে গেছে। এমন অসহ্যকর গরম এখন না, হাজার বছর আগেও এমন গরম পড়তো। তাই মুমিনদের জন্য প্রচন্ড গরমে রয়েছে সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে, আর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা)দোয়া শিখিয়ে গেছেন, তেমনি একটি দোয়া হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি‘মাতিকা ওয়া তাহবিলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ থেকে।‘ (মুসলিম ২৭৩৯, আবু দাউদ ১৫৪৫, রিয়াদুস সালেহিন ১৪৭৮)।
শীত ও গ্রীষ্ম মূলত আল্লাহ তাআলার হুকুম। আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা শীত-গ্রীষ্মের অবতারণা করেন।গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নমের তীব্রতা অনুমান করে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা। শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা আসে জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো। (বুখারি, হাদিস : ৩২৬০)।
গরমের তীব্রতা জাহান্নামের তীব্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কাজেই তীব্র গরমে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও গরমের তীব্রতা কমিয়ে পরিবেশ শীতল করতে বৃষ্টির প্রার্থনা করা উচিত।
বৃষ্টি না হওয়ায় তাপপ্রবাহে দেশের মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট হতে থাকলে প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে সালাত পড়ে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত। বৃষ্টির যিনি মালিক তাঁর কাছেই বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বলে ইসলাম। একেই আরবিতে বলা হয় ‘ইসতিসকা’ অর্থাৎ পানি প্রার্থনা করা। বৃষ্টি তো তাঁরই রহমত ও মহান কুদরতের প্রকাশ। তিনি চাইলে বৃষ্টি দেন, আবার চাইলে অনাবৃষ্টিতে ভোগান। তাই অনাবৃষ্টির এমন সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে বৃষ্টিদাতার দিকেই ফিরে আসা প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়’ (সূরা রুম : ৩৮)। অত্রএব বুঝা গেল, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের তীব্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণে তীব্র গরমে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিত।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য সালাত আদায় ও তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুক।আমিন।।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন,লেকচারার,ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,আতাকরা কলেজ,কুমিল্লা।

Posted inইসলাম ধর্ম লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা