ইসলাম সব ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সম্পদ থাকা সত্ত্বেও একেবারে না খেয়ে বা অতি অল্প খেয়ে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে থাকার কথা ইসলাম বলেনি। আবার অতিভোজনে শরীরকে অচল করে ইসলামের বিধান পালনে অবহেলা প্রদর্শন করাও বৈধ করেনি; বরং সব সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে বলেছে। কেননা অতি ভোজনে যেমন স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় থাকে না তেমনি ইবাদতেও একাগ্রতা পয়দা হয় না, অবহেলা দেখা দেয়। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু সীমাতিরিক্ত করো না। আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’। (সূরা আরাফ : ৩১)। উল্লেখিত আয়াতটি এদিকে ইঙ্গিত করে যে, খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে মাত্রা অতিক্রম করা যাবে না, ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তাহলে কাজকর্মে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকবে এবং ইবাদত বন্দেগি করা সহজ হবে।
হযরত উমর (রা.) খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে অপচয় বা সীমা লঙ্ঘণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে : একজন মানুষের অপচয়ের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কামনার সব কিছুকে ভোগে রূপান্তরিত করে। (কিতাবুয যুহদ, আহমাদ ইবনে হাম্বল : ১২৩)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা পানাহারকে হালাল করেছেন যতক্ষণ তা অপচয় (মাত্রাতিরিক্ত) হবে না এবং গর্ব করার জন্য হবে না। (তাফসিরে তাবারি ৫/৪৭২)।
অর্থাৎ খাবারের স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে অতিভোজনে মেতে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর খাদ্য নিয়ে গর্ব করার রূপ তো বহুমুখী। উল্লেখযোগ্য একটা হলো খাদ্য নিয়ে বাজি ধরা। যেহেতু বাজি ধরা মানেই হলো, স্বাভাবিক ভক্ষণের চেয়ে অতিরিক্ত ভক্ষণ তাই এটা নিষেধ করা হয়েছে। একেতো এভাবে বাজি ধরাই নাজায়েজ। সাথে আবার যুক্ত হয়েছে গর্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে উদরপূর্তির প্রতিযোগিতা। অনেক সময় এই প্রতিযোগিতার ভক্ষণ জীবনের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শরিয়ত এগুলো কখনো সমর্থন করে না।
নাফে বলেন : ইবনে উমর (রা.)-এর অভ্যাস ছিল, যতক্ষণ কোনো মিসকিনকে তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য বসানো না হতো ততক্ষণ তিনি খাবার খেতেন না। নাফে বলেন, আমি এক লোককে তার সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য বসালাম। সে প্রচুর খেল। তখন ইবনে উমর (রা.) আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, একে আর আমার সঙ্গে বসাবে না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, মুমিন খায় এক অন্ত্রে আর কাফের খায় সাত অন্ত্রে। (সহিহ বুখারি : ৫৩৭৫)।
উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্টভবে বুঝা যায়, ভারসাম্য বজায় না রেখে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া মুসলমানের অভ্যাস নয়; বরং সব সময় পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করাই হলো ইসলামের শিক্ষা। এই পরিমিত খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে শরিয়তের মূলনীতি যে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তা তুলে ধরা হলো : মানুষ উদরের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। তাদের জন্য মেরুদ-কে সোজা রাখে এই পরিমাণ কয়েক মুঠো আহারই যথেষ্ট। একান্ত যদি আরও বেশি খেতে হয় তাহলে উদরকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাবারের জন্য বরাদ্দ করবে, আরেক ভাগ পানি পান করার জন্য, আরেক ভাগ শ্বাস নেওয়ার জন্য। (জামে তিরমিজি : : ২৩৮০)। খাদ্য গ্রহণে উল্লেখিত সীমা রেখা যে কোনো জ্ঞানী মানুষ শোনামাত্রই নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নিবে। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রও হাদিসে উল্লেখিত শিক্ষার সঙ্গে একমত এবং গবেষণার মাধ্যমে হাদিসে বর্ণিত খাদ্য গ্রহণ করার পদ্ধতিকে স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী বিবেচনা করেছে।
হযরত উমর (রা.) একদিন খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন, তোমরা অতিরিক্ত ভোজন থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটা নামাজে অলসতা সৃষ্টি করে এবং শরীরের জন্য কষ্টদায়কও বটে। তোমরা দৈনন্দিন খাবারে পরিমিত আহার কর। কারণ এটা তোমাদেরকে প্রাচুর্যের অহংকার থেকে দূরে রাখবে এবং শরীরের জন্য উপকারী হবে। ইবাদতে অধিক শক্তি যোগাবে। জেনে রাখবে, মানুষ তখনই ধ্বংস হয় যখন সে দ্বীনের ওপর নিজের খাহেশাতকে প্রাধান্য দেয়।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাসুল(স)এর সুন্নাহ মোতাবেক খাদ্যাভ্যাস গড়ার তাওফিক দান করুক।প্রাচুর্যের অহংকার থেকে দূরে রাখুক।আমিন।।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।