1. [email protected] : thebanglatribune :
ভিসি বাসভবন-শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ | ১২:০৬ অপরাহ্ণ

ভিসি বাসভবন-শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের বহন করা শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার জেরে ভিসি বাসভবন-শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রক্টরের গাড়িসহ ক্যাম্পাসে থাকা অর্ধশত যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রামে বটতলী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ক্যাম্পাসগামী শাটল ট্রেন চৌধুরীহাট এলাকায় আসলে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর ফেসবুকে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়। এরই জেরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

এ ঘটনায় জামায়াত ও বিএনপির প্ররোচনা ছিল বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। তবে তাদের এই এজেন্ডা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি।

কি কি ভাঙচুর হলো?
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। যদিও ভিসি অধ্যাপক শিরীণ আখতার এ বাসভবনে থাকেন না। তবে, ভিসির বাসভবনের প্রায় প্রত্যেকটি কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ফুলের টব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিংমেশিন, কক্ষ, লকার, জানালা ভেঙে ফেলে শিক্ষার্থীরা। পরে আসবাব বের করে বাসভবনের উঠানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এ ছাড়াও বাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসসহ ক্যাম্পাসে থাকা প্রায় ৬০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নূরুল আবছার জানান, ভেতরে থাকা সব গাড়িতেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অধিকাংশেরই কাঁচ, ফ্লাডলাইট ও বডিতে আঘাত করা হয়েছে।

এসময় জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সেও ব্যাপক ভাংচুর করে শিক্ষার্থীরা। এতে থাকা চেয়ার টেবিল, ডাস্টবিনসহ প্রায় সকল আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রধান ফটকের সামনে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ক্লাবেও হামলা চালায়। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের গাড়ি ও শিক্ষক ক্লাবের আসবাবও ভাঙচুর করেছেন।

কারা ছিলেন এই বিক্ষোভে?
মূলত বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজবে। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। জিরো পয়েন্ট, ভিসির বাসবভন, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দপ্তরে থাকা যানবাহনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ভাংচুরে অংশ নেন। তবে রাত একটার দিকে বিক্ষোভ চলাকালেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। এরপরে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ কমে যায়।

জানা যায়, রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে এই তাণ্ডব ও ভাঙচুর। পরে দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত র‍্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত দেড়টার সময় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় র‍্যাব ও পুলিশ প্রটোকল নিয়ে পরিদর্শনে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পরিবহনের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষক ক্লাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রেলের বগিতে আগুন জ্বালানো হয়েছে, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার সাধারণ ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখানে নিশ্চয়ই জননেত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অ্যাজেন্ডা ছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে তারা।

এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যেকোনো দাবিদাওয়া থাকতে পারে। যাঁরা আহত হয়েছেন, আমরা তাঁদের জন্য দুঃখিত, মর্মাহত। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ছেলেমেয়েরা যাতে ছাদে না ওঠেন, সে জন্য রেলের বগি বাড়ানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসতর্কতা ও অদক্ষতার কারণে এতটা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু প্রশাসনকে এসব মোকাবিলা করতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রশাসনের অসতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে এত ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করছি।

প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, প্রধান ফটকে তালা দেওয়া থাকায় পুলিশ ভিতরে ঢুকতে পারেনি। এছাড়াও পুলিশ শহর থেকে আসতে দেরি করেছে।এঘটনায় দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

তবে এ ঘটনা প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তাঁরা নিরাপদ শাটল ভ্রমণ ও বগি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তাঁদের দাবি, গার্ডরা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করায় শিক্ষার্থীরা শাটলের ছাঁদে উঠতে পেরেছে। সাধারণত শিক্ষার্থীরা শাটলের বগিতে জায়গা করতে না পেয়ে বাধ্য হয়ে শাটলে উঠেন। ‘নিরুপায়’ হয়ে ছাঁদে ভ্রমণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।

এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, আগেই প্রশাসন বারবার জানিয়েছি আমাদের শাটলের বিষয়ে। শাটলে পর্যাপ্ত বগি নাই। প্রশাসন এ বিষয়ে জানা সত্ত্বেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পর্যাপ্ত বগি না থাকায় শহরে যেতে হলে অনেক সময় ছাঁদে ওঠা লাগে। আজকের এ দুর্ঘটনা প্রশাসনের অবহেলায় ঘটেছে। আমার ভাইয়ের রক্তের মূল্য দিবে কিভাবে প্রশাসন? এ প্রশাসনের পদত্যাগ চাই।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী আসিফ তালুকদার বলেন, শাটলের ছাঁদে ভ্রমণ যেমন ঝুকিপূর্ণ তেমনি অস্বস্তিকর। ধুলোবালি কিংবা বৃষ্টিতে অনেক ঝামেলা পোহাই। তবে কিছুই করার নেই, শাটলে দাঁড়ানোর জায়গা না থাকায় ছাদে উঠতে হয়। এটা বছরের পর বছর হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটি অজানা নয়। তারা কেন এতোদিন ব্যবস্থ নেয়নি?

বন্ধ রয়েছে শাটল চলাচল
এই দুর্ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে শাটল ট্রেন চলাচল। গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় যে ট্রেনটি ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেটি এখনো ক্যাম্পাসে রয়েছে। তবে রাত দুইটার পর থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী জানান, দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারকে লাঞ্ছিত করে। নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা স্টেশনে ট্রেন রেখেই চলে এসেছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আগের নিয়মে ট্রেন চলবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের ১৬ জনকে ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020