বিশ্বে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ২৫ শতাংশই বাংলাদেশে

বিশ্বে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ২৫ শতাংশই বাংলাদেশে

দেশে প্রাণঘাতী হয়ে পড়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস। সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। শহরের চেয়ে গ্রামের পরিস্থিতি বেশি নাজুক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে; আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ ত্রিশ হাজার। দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের ৭০টি দেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। সংক্রমিত এসব দেশের মধ্যে ২৫ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারের দিক থেকেও বাংলাদেশের ধারেকাছে আর কোনো দেশ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিসের আচরণ বদলালেও মশা নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রচলিত কর্মসূচি বদলায়নি। সময়মতো মশা মারতে না পারার বিষয়টি এডিসের বিস্তারে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি দিন দিন গুরুতর হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। এর পাশাপাশি রয়েছে- ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানছেন না চিকিৎসকরা। তদুপরি রয়েছে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর ৯১ শতাংশই গত দুই মাসে। সে অনুযায়ী জুলাই ও আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৩০ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪৬ জন, যা চলতি বছরের মোট মৃত্যুর ৮৮ শতাংশ। ডেঙ্গু আক্রান্ত বয়স্কদের অবস্থাও দ্রুতই জটিল হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এবার ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের বছর আরও ভয়ঙ্কর চিত্র দেখা যাবে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের অবস্থা গুরুতর হচ্ছে। শিশুরা বলতে পারে না, আর নারীদের একদিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অন্যদিকে রয়েছে চিকিৎসাজনিত অবহেলা। এবার ডেঙ্গুতে এত বেশি মৃত্যুর পেছনে আরও রয়েছে- দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি, ম্যানেজমেন্ট বিশেষ করে সঠিকমাত্রায় ফ্লুয়েড দিতে না পারা ও ওভার ফ্লুয়েড, নারীদের ভিটামিন ডির অভাব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে চলতি বছর যেসব ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে তাদের ৬৪ শতাংশ হয়েছে শক সিনড্রোমে। ঢাকায় মৃত্যু বেশি হলেও শক সিনড্রোমে সবচেয়ে বেশি ৭৩ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বাইরে। ঢাকায় এই হার ৬৩ শতাংশ। আর আক্রান্তদের শরীরের সবচেয়ে বেশি ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে ডেন-২। এ ছাড়া ২৯ শতাংশের দেহে ডেন-৩ এবং ১০ শতাংশের মাঝে মিলেছে ডেন-২ ও ৩ সেরোটাইপ বা ধরন।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) তথ্যমতে, গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ৭০টি দেশে ৩৭ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন দুই হাজার জন। শীর্ষ আক্রান্ত দেশের মধ্যে ব্রাজিল, বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনার নাম রয়েছে। তবে প্রাণহানির হার এসব দেশে অনেক কম।

সংস্থাটির তথ্যমতে, বিশ্বে মোট ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ৩ শতাংশ বাংলাদেশে। তবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এখানে। মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশই এশিয়ার এ দেশটিতে। ব্রাজিলে আক্রান্তদের মধ্যে মত্যুহার ০.০৭ শতাংশ, পেরুতে ০.৩০, আর্জেন্টিনায় ০.০৫, মালয়েশিয়ায় ০.০৭, বলিভিয়ায় ০.৩০ এবং আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতে ০.১০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ হার ০.৫০ শতাংশ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, আক্রান্তের অন্তত শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ শতাংশ মারা যাবেই। তবে সরকারিতে না হলেও বেসরকারিতে রোগী ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হচ্ছে। এতে করে মৃতের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি অনেকে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে যেতে চান না। আর নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। তাই, তাদের মৃতের হার বেশি

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *