আজ ভয়াল ২১ আগস্ট

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংসভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। ১৯ বছর আগে সেই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই হমালায় আহতদের মধ্যে এখনও দলের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেনেডের স্পিন্টার শরীরে বহন করে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। দিনটিকে গ্রেনেড হামলা দিবস হিসেবে পালন করে আওয়ামী লীগ। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে দিনটিকে স্মরণ করে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দলীয় কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগের সারা দেশের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সে দিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দূর্নীতিবিরোধী সমাবেশ’ ছিল। সমাবেশে খোলা ট্রাকে নির্মিত উম্মুক্ত মঞ্চে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। ভাষণ শেষ দিকে ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে মূহুর্তের মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। জঙ্গিগোষ্ঠীর চালানো ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় সেদিন পুরো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ওই ঘটনার জন্য তৎকালীন ক্ষমতাশীন বিএনপির আতাঁতের কথা বলে আসছে। ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় বিচারের কথা শেষ হয়েছে। সে দিন বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

সে দিন বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ছিল রক্তাক্ত। সেখানকার রাস্তায় পড়ে ছিল আওয়ামী লীগের অসংখ্যা নেতা-কর্মী। মানুষের গোঙানি আর কাতর চিৎকারে ভারি হয়ে ওঠেছিল সে দিনের আকাশ-বাতাস। গ্রেনেড হামলার সময় নেতা-কর্মীরা মানবঢাল বানিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। তবে প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী। সে দিন প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলিও। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে রায় দেয় আদালত। যেখানে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল ওই গ্রেনেড হামলা। ওই ঘটনার মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ানো হয়েছিল। যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে মাননীয় আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রদান করে। এই দুই মামলার রায়ে মোট ৪৯ জন আসামীর মধ্যে বিজ্ঞ আদালত ১৯ জনের মৃত্যুদ-, ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকী ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছেন। ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়। সেই তদন্তে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম বেরিয়ে আসে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। সে দিনের ঘটনায় আহত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর মধ্যে অনেকে আজও গ্রেনেডের স্পিন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। যন্ত্রণা নিয়ে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *