গেল ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর। অভিনেতার প্রথম সিনেমাটি সাফল্যের মুখ দেখায় ছোট পর্দার তারকাদের বড় পর্দায় অভিনয় প্রসঙ্গে রীতিমতো তর্কে জড়িয়েছেন অনেকই।
এমনকি এক সাক্ষাৎকারে নিশো বলেন অনেকেই মনে করেন, ছোট পর্দার অভিনেতাদের টিকিট কেটে বড় পর্দায় দেখতে যান না দর্শকরা। তিনি সেই ধারণা ভেঙেছেন।
শুধু তাই নয়, নিশোর ভাষ্য মতে, তার কাছে বাংলাদেশের সুপারস্টার হলো- গোলাম মুস্তাফা, হুমায়ুন ফরীদির মতো অভিনেতারা। যে বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। এ প্রসঙ্গে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
পাঠকদের উদ্দেশে বন্যার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের বড় পর্দা ছোট হয়ে যেত বহু আগে, যদি ছোট পর্দা থেকে নির্মাতা আর অভিনেতারা এসে কাজ না করতেন। অভিনয় মানের কোনো মিনিমাম প্রতিযোগিতা থাকতো না তাহলে। কয়েকজন মানুষকে নিয়ে কোনো কারখানা চলে না। আর চলে না বলেই ভিন্ন দেশ থেকে লোকজন ধার করতে হয়। বাংলাদেশের সিনেমা চাঙ্গা হতে ছোট পর্দার নির্মাতা ও অভিনেতার দরকার হয়েছে। আর তাছাড়া চলচ্চিত্র একটা বড় মাধ্যম। এতে কোনো দেশেই একটা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক কাজ করেন না। থিয়েটার, মিউজিক, লিটারেচার থেকে তো আসেনই, টিভি রেডিও থেকেও আসেন। আর এটাই হলো সিনেমার ইতিহাস।
মনে হয় ইতিহাসটা সকলেই ভুলতে বসেছেন। আবোল-তাবোল সব তর্ক করলে তো ইতিহাস বদলাবে না, গায়ের জোর দেখানো হবে। গোলাম মুস্তাফা সুপারস্টার তো ছিলেন বটেই, এমনকি খলিলও ছিলেন। নায়কদের মধ্যে কেবল না, তখন সুপারস্টার ছিলেন খলনায়ক, কৌতুকাভিনেতা, প্লেব্যাক সিংগার, এমনকি চিত্রগ্রাহকের মধ্যেও। বুঝতে অসুবিধা হলে বেবি ইসলামদের মতো মানুষের নাম মনে করুন। জিজ্ঞাসা করুন পুরাতনদের। ঢাকার কালচারের অভিজাত ছিলেন এরা সকলেই। এবং অভিজাতরাও সিনেমায় যেতেন এদেরই কারণে।
সো কলড কাটপিস, অশ্লীল (শব্দটা খুব খারাপ যদিও) দিয়ে যখন সিনেমা কোনোমতে চলে, হল সব যখন বন্ধ হতে শুরু করেছে, তখন সেই কারখানা যতটুকু দাঁড়ালো তা ছোট পর্দার নির্মাতা আর অভিনেতাদের হাত ধরে। কেউ এটা অস্বীকার করলে কিছু যাবে আসবে না। সময়টার দিকে ঘুরে দাঁড়ালে এটাই বোঝা যাবে। ঠিক তেমনি করেই যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন তাদেরও অবদান আছে। সিনেমা কারখানা কারও একক মালিকানাধীন নয়।
এটাও বলতে চাই যে ‘অশ্লীল’ শব্দটা শুনতেই বেঠিক লাগে কানে। বিশেষ করে যখন নায়িকাদের বা নারী অভিনেত্রীরদের নামের সঙ্গে বলা হয়। সব কিছুর সীমা থাকা উচিত! যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তারা সম্পুর্ণ নির্দোষ। কারণ এটা করেছেন বাংলাদেশের সিনেমা নির্মাতারা। যারা পর্দায় এসেছেন তাদের কোনো ত্রুটি নেই। তারা কেবল কাজ করেছেন। তারা ম্যানুপুলেটেড হয়েছেন। নিরুপায় হয়ে কাজ করেছেন। তাদের নামের সঙ্গে এই সব ট্যাগ করা বিশেষণ আরও একবার ম্যানিপুলেশন, এবিউজ। সিনেমার কারখানা যেহেতু পুরুষের দখলে তাই নারীদের কোন দায়ভার নেই।