‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে’

‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে’

বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবার দিকে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে সুশীল সমাজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক গ্রুপগুলোকে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে সেটি নিয়েও সুশীল সমাজ চিন্তিত।
যুত্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে এসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘২০২৩ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’ শীর্ষক বার্ষিক এই প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশ অংশে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে ১৬৫টির বেশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ অংশে দেশের উন্নয়নের প্রশংসার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সমালোচনাও তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ একটি মধ্যপন্থি, ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল দেশ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৯টিতে জয়লাভ করে। সে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হয়রানি এবং সহিংসতার কারণে স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা ও সমাবেশ করা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল।

এতে বলা হয়, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল যেসব আইন ও নীতি গ্রহণ করেছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কথা বলার স্থান সংকুচিত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব এবং মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলেছে।

এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে দেশে লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কমে ৩২.২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বিদেশি মুদ্রার এই সংকটের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২.৮ বিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগেরই হদিস নেই সরকারের কাছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিনিয়োগের বাধা অপসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি। কিন্তু অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, আমলতান্ত্রিক বিলম্ব, শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ ও দুর্নীতির কারণে এখনও বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে চেষ্টা করছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ নীতির এখনও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক খাত ব্যাংকের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। অথচ ২০২২ সালে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে। ১১টি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনার দিক আছে। বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে উল্লেখ করছে আমেরিকা। যেসব ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা দেখছে আমেরিকা সেগুলো হচ্ছে– বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি সামগ্রী, প্রযুক্তি, অবকাঠামো, টেক্সটাইল, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সামগ্রী, ই-কমার্স এবং স্বাস্থ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বড় ধরনের কোনো বৈষম্য নেই। তবে সরকার সাধারণত দেশীয় শিল্পকে গুরুত্ব দেয়। এতে বলা হয়েছে, আমেরিকার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে বড় ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে যত গ্যাস উত্তোলন হয়, তার ৫৫ শতাংশ আমেরিকার কোম্পানিগুলো করে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আমেরিকার কোম্পানি রয়েছে। জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদানি শুরু করেছে। এ জন্য মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে ২০১৮ সালে। আমেরিকার একটি কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে এবং আগামী ১৫ বছর সেটি পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশের কৃষি খাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের কৃষি খাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র : বিবিসি

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *