বিরোধী আন্দোলন দমনে সরকার ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে প্রয়োগ করছে নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট-সাটডাউন’। নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জনগণকে, কেড়ে নেয়া হচ্ছে মত প্রকাশের অধিকারকে। সরকার পতনের চলমান এক দফা আন্দোলনের সম্পূরক হিসেবে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট শাটডাউন, নজরদারি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, মোবাইল ফোর তল্লাসীসহ সকল ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব। গতকাল রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মিডিয়া সেলের আয়োজনে ইন্টারনেট-শাটডাউনসহ সকল ধরণের নির্যাতনের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইন্টারনেট-সাটডাউনের ঘটনাকে নাগরিক অধিকারের ভয়ংকর লঙ্ঘন। এটা গুম-খুনের মতোই একটা অপরাধ। কোনো ব্যক্তি গুমের শিকার হলে কেবল একজন হারিয়ে যান। কিন্তু কোনো স্থানে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হলে তার শিকার হয় দেশ-বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ। মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনি অনলাইন থকে তার অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও অপরাধ। ক্রমাগতভাবে এই অপরাধ করে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। গত ১২ জুলাই নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা বিচ্ছিন্ন ও বিঘিœত করাসহ গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘এক্সেস-নাও’ এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেট শাটডাউনের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। তার আগে চারটি দেশে (ভারতে ৮৪ বার, ইউক্রেনে ২২ বার, ইরানে ১৮ বার ও মিয়ানমারে ৭ বার) বর্তমান বিদ্রোহ অথবা যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করেছে যা তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণ বলে তারা দাবি করেছে। আমাদের প্রশ্ন পঞ্চমস্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি কোনো যুদ্ধ চলছে? কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে ৬ বার ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট পরিসেবা মত প্রকাশের অপরিহার্য একটি মাধ্যমে। ইন্টারনেট পরিসেবা আজ শুধু সোসাল মিডিয়ার বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা আর্থিক লেন-দেন, শেয়ার, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, ডাটা, আউট সোসিং, বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মসংস্থান ও চাকরি-সাক্ষাতকারসহ অসংখ্য গুরুত্ত¡পূর্ণ ক্ষেত্র স¤প্রসারিত হয়ে জীবন জীবিকার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের মতো ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবে ব্যক্তির নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন, জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচরণ বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে রাস্তা-ঘাটে সাধারণ মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করে তাদের মোবাইল তল্লাশির নামে পুলিশ গণহয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
