জিলহজের প্রথম দশকের আমল

জিলহজের প্রথম দশকের আমল

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় সময়ের হিসেব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-জমিনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল (কারণ, আরবরা মাস-বছরের হিসেব কম-বেশি ও আগ-পিছ করে ফেলেছিল); বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক : জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মাঝের মাস। (সহিহ বুখারি : ৪৬৬২)।

জিলহজ সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ মাস। এ চার মাসের মধ্যে জিলহজ মাসের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ মাসেই আদায় করা হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন ও নিদর্শন হজ এবং অপর নিদর্শন ও মহান আমল কুরবানি। এ মাস আল্লাহর কাছে সম্মানিত। এতে রয়েছে এমন দশক, আল্লাহ তায়ালা যার কসম করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) জিলহজ মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো, তোমাদের এ মাস (জিলহজ)। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৯৩১)।
আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের দান করেছেন ফজিলতপূর্ণ বিভিন্ন দিবস-রজনী। বছরের কোনো কোনো মাস, দিন বা রাতকে করেছেন ফজিলতপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যম-িত। যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দা ক্ষমা লাভ করতে পারে, নেক আমলে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম প্রধান ফজিলতপূর্ণ মাস।
এ মাসের প্রথম দশককে আল্লাহ তায়ালা করেছেন বৈশিষ্ট্যম-িত। এ দিনগুলোতেই হজের মৌলিক আমল সম্পাদিত হয়। দশ জিলহজ সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কুরবানি করেন। এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয়।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর নিকট জিলহজের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। (সুনানে আবু দাউদ : ২৪৩৮)।
আশারায়ে জিলহজ : আল্লাহ কসম করেছেন যে দশ রাতের। আমরা জেনেছি, জিলহজ মাস আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান মাস। আবার এ মাসের মধ্যে প্রথম দশক হলো প্রধান। এ দশক এতটাই ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, আল্লাহ তায়ালা এ দশ রাতের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। (সূরা ফাজর : ১-২)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও মুজাহিদ (রাহ.)-সহ অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৫৩৫)। এ দশককে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হলো, জিলহজের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ওই ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে। (মুসনাদে বাযযার : ১১২৮)।
সম্মানিত মাস সম্মানিত দশক : গুনাহের মাধ্যমে এর সম্মান বিনষ্ট না করি। মুমিন তো আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সুযোগকে গনিমত মনে করে কাজে লাগায়। এসকল ফজিলতপূর্ণ মওসুমে নেক আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার আমলের খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারও দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক আমলের তো তাওফিক হলো না; কিন্তু গুনাহে কলুষিত হলো আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়। এক কবি বড় সুন্দর বলেছেন, নেক আমল করতে যদি না পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।

লেখকঃ কলেজ শিক্ষক

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *