আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী গত ২ জুন শুরু হওয়া নির্বাচনী গতরাতে শেষ হয়েছে। সোমবার (১৯ জুন) শেষ প্রচার-প্রচারণায় মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল রাজশাহী। এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টি কেন্দ্র-ই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে (বুথ) সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হবে। ইতোমধ্যে ১৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এই নির্বাচনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৬ জন। এছাড়া নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। এবারই প্রথম রাজশাহী সিটি নির্বাচনে সবগুলো ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় উত্তাপ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেননি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনিসুর রহমান জানান, আমাদের কাছে সবগুলো ভোটকেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সব ভোটকেন্দ্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৬ খেকে ৭ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে পাঁচজন করে পুলিশ থাকবে। তিনি জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও র্যাব ছাড়াও সাদা পোষাকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে দমন করা হবে।
রিটার্নিং ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, রাজশাহী সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি ভোট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবেন। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থান নেওয়া হবে।
এদিন আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে নগরীর ‘জয়বাংলা চত্ত্বর’ থেকে এক বিশাল প্রচার মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, কুমাড়পাড়া দলীয় কার্যালয়, আরডিএ মার্কেট, মনিচত্বর ও সোনাদীঘি হয়ে পুনরায় ‘জয় বাংলা চত্বরে’ গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দেয়।
এর আগে ‘জয় বাংলা চত্বরে’ সংক্ষিপ্ত পথসভায় নৌকার মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহীতে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ জয় বাংলা চত্বরে জমায়েত হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার সময় মানুষের যে সাড়া পেয়েছি, ২১ জুন নৌকার বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।’ সোমবার (১৯ জুন) দুপুর ১২টায় নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ‘মিট দ্যা প্রেস’ প্রোগ্রামে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন সারাদেশে দৃশ্যমান করেছেন। আমরা রাজশাহীতে উন্নয়নের যে ধারা সূচনা করেছি, সেটি অব্যাহত রাখতে চাই। রাজশাহীর মানুষের জন্য কর্মের ব্যবস্থা করতে চাই। রাজশাহীবাসীর প্রতি আমার আহবান আপনাদের কল্যানে কাজ করতে আমাকে আরেকটিবার সুযোগ দিন।’
এসময় তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, তারা মনে করেছিল তাদের ছাড়া নির্বাচন হবে না। দেখুন রাজশাহীতে কত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি, আগামী জাতীয় নির্বাচনও ঠেকাতে পারবে না।