1. [email protected] : thebanglatribune :
  2. [email protected] : James Rollner : James Rollner
মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতার মূল বিষয় হল,মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন - The Bangla Tribune
এপ্রিল ২০, ২০২৪ | ৩:৪৯ অপরাহ্ণ

মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতার মূল বিষয় হল,মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, মে ২৬, ২০২৩

সফলতা ও ব্যর্থতা অতি পরিচিত দুটি শব্দ। সবার কাছে এর সংজ্ঞা এক না হলেও দুনিয়ার সবাই সফলতা লাভ করতে চায়। এর মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি ও অগ্রগতির হিসাব করে। তবে একজন মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতা সেটাই, যার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন পাড়ি দিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে সুখ ও শান্তি লাভ করে। আল্লাহ তাআলার নায ও নিআমতপূর্ণ জান্নাত লাভ করে। আযাব ও গযবের জাহান্নাম থেকে চিরমুক্তি লাভ করে।
আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৫
হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হযরত নবী কারীম (সা) ইরশাদ করেছেন-.
তোমাদের কারও চাবুক (-এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ) পরিমাণ জান্নাতের জায়গা, দুনিয়া ও দুনিয়ায় অবস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।
হযরত সাহল রা. বলেন, একথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিন্মক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-.
যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। -(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/১৭৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩০১৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৪১৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩১৭০)
কুরআন মাজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে- সেদিন (কিয়ামতের দিন) যে ব্যক্তি থেকেই তা (জাহান্নামের শাস্তি) দূর করে দেওয়া হবে তার প্রতি আল্লাহ বড়ই দয়া করলেন। আর সেটাই স্পষ্ট সফলতা। -সূরা আনআম (৬) : ১৬
কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার মাধ্যমে মুমিনদের সফলতা লাভের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-.(হে নবী) সেদিন আপনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে দেখবেন, তাদের সামনে ও ডান দিকে তাদের নূর ছুটাছুটি করছে। (তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, যাতে তোমরা সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সফলতা। -সূরা হাদীদ (৫৭) : ১২
যে সফলতা কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত, যে সফলতা হাদীসে নববীর বক্তব্য দ্বারা সাব্যস্ত এবং বিবেকবান প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা ও ভাবনায় যা সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই সফলতার প্রতি প্রত্যেকেরই আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেই সফলতা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। অতএব এর জন্য যে কোনো ধরনের ত্যাগ ও সাধনাকে গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য জীবন-প্রাণ বিলিয়ে কাজ করা উচিত। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-. নিশ্চয় এটাই প্রকৃত অর্থে মহা সফলতা। এমন সফলতার জন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত। -সূরা সাফফাত (৩৭) : ৬০-৬১। এই সফলতার প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হল।
 ঈমান ও নেক আমল
কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই মহা সফলতা। -সূরা বুরূজ (৮৫) : ১১
আরও ইরশাদ হয়েছে-. সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তো তাদের প্রতিপালক নিজ রহমতের ভেতর দাখিল করবেন। এটাই সুস্পষ্ট সফলতা। -সূরা জাছিয়া (৪৫) : ৩০
রাসূলে কারীম (সা)ইরশাদ করেন-.
যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার কাছে যেন এমন অবস্থায় মৃত্যু আসে, যখন সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমন আচরণ করে, তার প্রতি অন্যের যেমন আচরণ সে পছন্দ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৪৪
 মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-. যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা তাতে থাকবে চিরদিন। আর এটাই মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য থাকবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। -সূরা নিসা (৪) : ১৩-১৪
ইরশাদ হয়েছে- আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৭১
 তাকওয়া ও আল্লাহভীতি
আল্লাহ তাআলা বলেন- আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করে চলে (তাকওয়া অবলম্বন করে), তারাই সফলকাম। -সূরা নূর (২৪) : ৫২
ইরশাদ হয়েছে-. স্মরণ রেখ, যারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠ তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের দুনিয়ার জীবনেও সুসংবাদ আছে এবং আখেরাতেও। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন হয় না। এটাই মহা সফলতা। -সূরা ইউনুস (১০) : ৬২-৬৪
ইরশাদ হয়েছে-
নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। উদ্যানরাজি ও আঙুর, সমবয়সী নব যৌবনা তরুণী এবং ছলকানো পান-পাত্র। সেখানে তারা কোনো অহেতুক কথা শুনবে না এবং কোনো মিথ্যা কথাও না। এসব হবে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পুরস্কার, (আল্লাহর) এমন দান, যা মানুষের কর্ম হিসাবে দেওয়া হবে। সেই প্রতিপালকের পক্ষ থেকে, যিনি আকাশম-লী, পৃথিবী ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর মালিক, দয়াময়। -সূরা নাবা (৭৮) : ৩১-৩৭
 সত্যবাদিতা
মহান আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাআলা বলবেন, এটা সেই দিন, যেদিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সফলতা। -সূরা মায়িদা (৫) : ১১৯
 মুমিনদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি
আল্লাহ তাআলা বলেন-
মুমিন নর ও মুমিন নারী পরস্পরে একে-অন্যের সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ করে অসৎ কাজে বাধা দেয়, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ নিজ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতারও মালিক, হিকমতেরও মালিক। আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এমন উদ্যানরাজির, যার তলদেশে নহর বহমান থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে এবং এমন উৎকৃষ্ট বাসস্থানের (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন), যা সতত সজীব জান্নাতে থাকবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিস (যা জান্নাতবাসীগণ লাভ করবে)। এটাই মহা সফলতা। -সূরা তাওবা (৯) : ৭১-৭২
 সবর ও ধৈর্য
ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাতের কথা কুরআন মাজীদের আরও বেশ কয়েকটি আয়াতে এসেছে। মূলত ধৈর্যের বড় একটি প্রকার হল, ইবাদত-বন্দেগী যথাযথভাবে আদায় করার ক্ষেত্রে ধৈর্য। আরেকটি প্রকার হল, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য। ধৈর্যের তৃতীয় প্রকারটি হল বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদে ধৈর্য। মোটকথা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার জন্য ধৈর্যের গুণটি অপরিহার্য। ধৈর্য সম্পর্কে কুরআন মাজীদের আয়াত হল-. তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর করে আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদের প্রতিদান দিব। -সূরা নাহল (১৬) : ৯৬
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিই মহা সফলতা। আল্লাহ তাআলা বলেন-.আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এমন উদ্যানরাজির, যার তলদেশে নহর বহমান থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে এবং এমন উৎকৃষ্ট বাসস্থানের (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন), যা সতত সজীব জান্নাতে থাকবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিস (যা জান্নাতবাসীগণ লাভ করবে)। এটাই মহা সফলতা। -সূরা তাওবা (৯) : ৭২
এই হল কুরআন মাজীদে বর্ণিত সফলতা ও সফলতা লাভকারীদের গুণ-পরিচয়। এইসব গুণ ও সফলতা প্রত্যেক ঈমানদারেরই একান্ত আরাধ্য এবং সর্বোচ্চ কাক্সিক্ষত বিষয়। এই সফলতার মূল বিষয় হল, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহাসফলতা দান করুন। এই সফলতার জন্য জীবন-প্রাণ বিলিয়ে মেহনত করার তাওফীক নসীব করুন- আমীন।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন, প্রভাষক,ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020