বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বিভিন্ন রকম আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। একদিকে সাগর হওয়ায় দেশের সরাসরি তিনটা বিভাগের প্রায় ৩১টি জেলা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কারণে দক্ষিণবঙ্গের খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল—এই তিন বিভাগ দুর্যোগের রেড জোনে থাকে। পাশাপাশি অন্যান্য জেলায়ও প্রভাব পড়ে, তবে সেটা নির্ভর করে দুর্যোগের মাত্রার ওপর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি। বসন্ত শেষ হতে না হতেই বঙ্গোপসাগর ফুলে-ফেঁপে ওঠে আর সেটা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আছড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। বঙ্গোপসাগর একদিকে যেমন সম্পদ আহরণের আধার, তেমনি এর কশাঘাতও ভয়ংকর। বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চারপাশেই বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এটাকে এখন জেলা না বলে বঙ্গোপসাগরের একটা দ্বীপ বলা চলে।
বাংলাদেশে আঘাত হানা সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ছিল ছিত্রাং। এর তাণ্ডবে কয়েক জেলায় প্রায় ২০ জন মারা যায় এবং কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। চলতি মৌসুমেও বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক একজন গবেষক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ৮ থেকে ৯ মের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া এবং ১১ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোচা ১৪ মে মধ্যরাতের পরে থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থলভাগে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, স্থলভাগে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড়টি খুবই শক্তিশালী হিসেবে আঘাত হানতে পারে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোচা স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। আরো শঙ্কার ব্যাপার হলো, পুরো এপ্রিল মাসে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় হয়ে আছে। আর ঘূর্ণিঝড় মোচা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখের চেয়ে এক-দুই দিন পিছিয়ে গেলে বা দেরিতে এলে এই ঝড় কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী হবে। কারণ আগামী ১৯ মে অমাবস্যা। এ সময় এমনিতেই শক্তিশালী জোয়ার হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে মোচা। নামটি রেখেছে ইয়েমেন। লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত ইয়েমেনে মোচা নামে একটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। সেই অনুসারেই নামটি রাখা হয়েছে।