স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের জন্য এবং পিরিয়ডকালীন দুর্ভোগ এড়াতে গণপরিবহনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সরবরাহ থাকা বাস্তবসম্মত ও সুচিন্তার প্রতিফলন। পিরিয়ড ট্যাবু নয়। পিরিয়ড নারীর জীবনের স্বাভাবিক এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা সমস্যা নয়, বরং নারীর আর পাঁচটা বিষয়ের মতো একটা প্রাকৃতিক বিষয়। আপনি, আমি এবং আমাদের অস্তিত্বের জানান দেয় পিরিয়ড। নারীদের জন্য এটা অনিবার্য সত্য হলেও নিষিদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সমাজে। প্রতি মাসের প্রায় পাঁচ-সাত দিন একটু ভিন্ন সময়ের মধ্যে কেটে যায়। বিশেষ সময়ে ভালো থাকতে দরকার স্বস্তিদায়ক পরিবেশ। কিন্তু সামাজিক ট্যাবুর কারণে সেই পরিবেশ তৈরি করতে আমরা অক্ষম। এমনকি যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় দূরপাল্লার পরিবহনে যাতায়াতের সময়। কারণ আমাদের এখন পর্যন্ত বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যাতায়াতব্যবস্থায় নারীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা নেই। সেই সময় যদি পিরিয়ড শুরু হয়, তখন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একদিকে সামাজিক ট্যাবু, তার সঙ্গে আমাদের অপ্রতুলতা, দুই মিলে প্রবাহিত হয় ভিন্ন ধারা। নারীর বিচরণ যখন ঘরে-বাইরে, তখন আমাদের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন দরকার।
দীর্ঘক্ষণ প্যাড ব্যবহারের ফলাফল ভয়াবহ। অনেকক্ষণ একই প্যাড পরে থাকায় ঘাম ও রক্তের কারণে আবদ্ধ স্থানে ফাঙ্গাসের সৃষ্টি হয়, যা পরে ত্বকের সমস্যার পাশাপাশি জরায়ু, পায়ুপথেও সমস্যার সৃষ্টি করে। পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা করার কারণে জরায়ুর সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। সাধারণত পিরিয়ডের সময় চার-পাঁচ ঘণ্টা পর ন্যাপকিন পরিবর্তনকে স্বাস্থ্যসম্মত বলা হয়, কিন্ত দূরপাল্লার ভ্রমণ বা রেলওয়ে ভ্রমণ বেশির ভাগ সময় ৮-১০ ঘণ্টার হয়। সে ক্ষেত্রে কীভাবে সুরক্ষায় থাকবেন একজন নারী? আমাদের দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো অনেকে পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। দূর-পাল্লার পরিবহনে যখন স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা থাকবে, তখন গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। এতে একদিকে যেমন সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে যাবে, অন্যদিকে যাত্রাপথে অস্বস্তি থেকে রেহাই পাবে নারীরা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ওয়াটার এইডের সহায়তায় ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’ বা আইসিডিডিআর’বির জরিপে দেখা যায় যে, দেশের শতকরা ৮৬ শতাংশ নারী পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। তারা পুরোনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করে। এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে নারীরা যেসব কারণে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২৮ মে বিশ্ব মাসিক দিবস পালন করা হয়। দিবসটি পালনের প্রধান লক্ষ্য থাকে পিরিয়ড সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের মাত্র ২০ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। অতএব, সময় এসেছে সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের।