1. [email protected] : thebanglatribune :
নব্য ফেতনা আহলে কুরআন - The Bangla Tribune
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ | ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

নব্য ফেতনা আহলে কুরআন

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, মে ৬, ২০২৩

দুনিয়াতে ফেতনার অভাব নেই। মানুষের ঈমান-আমল নষ্ট করার জন্য কত ধরনের কত কথা! আহলে কুরআনরা বলে, ‘আমরা শুধু কুরআন মানি। আমাদের কিছু বলতে হলে সরাসরি কুরআন থেকে দেখাতে হবে। কুরআনের বাইরে বা কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা করে কিছু বললে আমরা তা মানি না।’ অর্থাৎ কুরআনের ব্যাখ্যায় রাসূলের হাদীস বা সাহাবায়ে কেরামের বাণী পেশ করলে তারা তা মানতে রাজি নয়। তার মানেযাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তাঁর থেকে যাঁরা কুরআন শিখেছেন তাঁরা কী বুঝেছেন সেটা নয়আমরা বা আমি যেটা বুঝেছি সেটাই আসল বুঝ- নাউযুবিল্লাহ! বলুনএটা কি কুরআন মানাকখনো নয়।

লক্ষ করুনরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কুরআন তিলাওয়াত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন। আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই তিলাওয়াত করতে হবে। আমরা যদি নিজেদের ইচ্ছেমতো তিলাওয়াত করিশব্দ পরিবর্তন করিহ্রাস-বৃদ্ধি ঘটাই বা বিন্যাস পরিবর্তন করে ফেলি তাহলে কি বৈধ হবেকখনো নয়। বরং তা হবে কুরআনের চরম বিকৃতি ও অবমাননা।

আহলুল কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা। নব্য আহলে কুরআনেরা’ এটিকে নিজেদের জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إن لله أهلينَ من الناس.

নিশ্চয়ই মানুষদের মধ্যে অনেকে আল্লাহরআহল’ (অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ ব্যক্তি)।

সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন-

يا رسول الله من هم؟

হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা?’

আল্লাহর রাসূল বললেন-

هم أهل القرآن، أهل الله وخاصّته

তারা আহলুল কুরআন-কুরআনওয়ালা। তারাই আল্লাহর আহল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠজন।’ –মুসনাদে আহমদহাদীস ১২২৭৯সুনানে কুবরানাসায়ীহাদীস ৭৯৭৭সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ২১৫

সবচে বড় কুরআনওয়ালা হলেন স্বয়ং রাসূলে আকরাম *সা) সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা)। তাঁর উপর আল্লাহ তাআলা কুরআন নাযিল করেছেন। তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত এবং কুরআনের ব্যাখ্যা ও তাফসীর শিখিয়েছেন। তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন- তিনি যেন মানুষকে কুরআনের তিলাওয়াত শেখানকুরআনের অর্থ-মর্ম ও বিধি-বিধান শেখানতাদের সামনে কুরআনী জীবনের বাস্তব নমুনা পেশ করেনকুরআনে নির্দেশিত ইবাদতসমূহের পদ্ধতি ও পরিপূর্ণ রূপরেখা শেখান এবং তাদেরকে কুরআনী শরীয়ত (যা নবীজীর সুন্নতও বটে) শিক্ষা দেন।

এরপর মানুষের উপর ফরয করেছেন- এই সকল বিষয়ে তারা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করেতাঁর অনুসরণ করে এবং তাঁর জীবন থেকে নিজেদের জীবনের আদর্শ গ্রহণ করে। সঙ্গে কুরআনে এই সাক্ষ্যও দিয়ে দিয়েছেন যেরাসূলুল্লাহ (সা) মানুষকে কুরআন এবং তাতে নির্দেশিত সিরাতে মুসতাকীমেরই পথ দেখান। কুরআনী নূরের মাধ্যমেই তিনি মানুষকে ভ্রষ্টতা ও মূর্খতার অন্ধকার থেকে হেদায়েত ও ইলমের আলোর দিকে নিয়ে যান।

অতএব খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত রাসূলে আকরাম (সা) হলেন সর্বপ্রথম ও সবচে বড় আহলুল কুরআন’ বা কুরআনওয়ালা। দ্বিতীয় পর্যায়ের আহলুল কুরআন হলেন সাহাবায়ে কেরাম। সাহাবায়ে কেরামকে আল্লাহ তাআলা কুরআনের সর্বপ্রথম তালিবে ইলম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। তাঁদেরকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযাঁর উপর এই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ ((সা)কে কুরআন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে মানদণ্ড বানিয়েছেন। যেমন কুরআনের প্রতি ঈমানকুরআনের পাঠ’ ও তার তিলাওয়াতকুরআন অনুধাবনকুরআনের ব্যাখ্যাকুরআন অনুযায়ী আমল ইত্যাদি। আর এই মহান আমানতের প্রথম বহনকারী ও প্রথম সাক্ষ্যদানকারী বানিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামকে। পরবর্তীদেরকে কুরআন হাসিলের ক্ষেত্রে তাঁদের মুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। এজন্য রাসূলে কারীম (সা)এর পবিত্র সীরাত ও শিক্ষা ছেড়ে কুরআনের প্রতি ঈমান আনাই অসম্ভব।

আর সাহাবায়ে কেরামকে রাসূলুল্লাহ (সা) যে কুরআনী যিন্দেগীর উপর রেখে গিয়েছেন সেটাই সাবীলুল মুমিনীন’-মুমিনদের পথ। মুমিনদের পথ থেকে বিমুখ হওয়া আল্লাহ তাআলার নিকট এমন অপরাধযেমন অপরাধ রাসূলুল্লাহ (সা)এর বিরুদ্ধাচরণ করা। এই দুই অপরাধের একই শাস্তি আর সেটা হল জাহান্নাম।

আহলে কুরআন’ নামধারীরা রাসূলুল্লাহ (সা)কে -নাউযুবিল্লাহ- ডাকপিয়নের মত মনে করে। ডাকপিয়ন পত্র পৌঁছে দিলেই তার কাজ শেষ। তাদের কাছে রাসূলুল্লাহর কাজটিও যেন এমনই। অর্থাৎ রাসূলের দায়িত্ব ছিল কেবল কুরআন পৌঁছে দেওয়া। তিনি পৌঁছে দিয়েছেনব্যসতাঁর কাজ শেষ। এখন কুরআন বোঝাতদনুযায়ী কুরআনী ও ঈমানী জীবনের রূপরেখা তৈরি করাতা থেকে আল্লাহর নির্দেশনাবলি ও বিধানাবলি উদ্ঘাটন করাতাতে ফরযকৃত ইবাদতসমূহ আদায়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করা- এই সব কাজ আমাদের!! নাউযুবিল্লাহ।

অতএব নব্য আহলে কুরআনের পরিচয় হলতারা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহর চাইতে অধিক কুরআন অনুধাবনকারী ও অনুসরণকারী এবং কুরআনওয়ালা মনে করে। শুধু এটুকু নয়তারা যেন এটাও বলতে চায় যে, ‘কেবল আমরাই কুরআন বুঝি এবং কুরআন মানি।’ সেজন্য তাদের শ্লোগান হল, ‘রাসূলের হাদীসসুন্নতসীরাত নয়মানব শুধু কুরআন। স্পষ্টএটা রাসূলের প্রতি চরম অবমননা।

এ ধরনের অবমাননার অর্থ হলতাদের না আছে রাসূলের প্রতি ঈমান ও নির্ভরতানা আছে কুরআনের প্রতি ঈমান। এর অনিবার্য ফল হলআল্লাহ তাআলার নিকট তাদের কুরআন মানাই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কুরআনের প্রতি ঈমান ও কুরআন অনুযায়ী আমলের যে পন্থা ও মাপকাঠি আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে দিয়েছেনসেটার প্রতি তাদের আস্থা নেই। তাদের আস্থা কেবল নিজেদের বুঝ ও পছন্দের প্রতি।

এই নব্য আহলে কুরআনের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়মুসলিম উম্মাহর প্রথম শতাব্দীতে যে মুনাফিকরা ছিলতারা কখনো কখনো প্রশ্ন ওঠাতএই হাদীস কুরআনের কোথায় আছেযাদের ঈমান ও ইলম তখনো পরিপক্ব হয়ে ওঠেনিহয়ত তাদের কেউ কেউ সে প্রশ্ন কোনো সাহাবী বা কোনো তাবেয়ীর সামনে রাখত। তখন তাঁরা তাদের সংশয় কীভাবে দূর করতেন সেটাও ইতিহাসে সংরক্ষিত রয়েছে। কোনো সুযোগে তা পাঠকবর্গের সামনে পেশ করব- ইনশাআল্লাহ।

আমরা কম মানুষই হয়ত জানিনব্য আহলে কুরআনের এসব কুফরী চিন্তা-ধারার প্রচার-প্রসার এখন আমাদের দেশেএমনকি আমাদের রাজধানীতেই চলছে। প্রয়োজন সতর্কতা ও বিচক্ষণতা। মুমিনের জন্য ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই সম্পদ হেফাযত করা ফরয। সর্তক থাকতে হবেকখন কে এই সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চলে আসে।

এই প্রেক্ষাপট এবং সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতার ভিত্তিতেই বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি প্রস্তুত হয়েছে।  আল্লাহ তাআলা আমদের খায়ের দান করুন এবং আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং এ থেকে পুরোপুরি উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন।

লেখকঃকলেজে অধ্যাপনা করছেন

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020