রাসূলের শেখানো তিলাওয়াত যেমন ধারাবাহিকভাবে আমাদের নিকট রয়েছে তেমনি তাঁর শিক্ষাও আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ -এর তিলাওয়াত যেভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ থেকে শিখেছি, সেটার বিধানও আমরা তাঁর থেকে লাভ করেছি। সালাত কায়েম কীভাবে করতে হবে, কখন করতে হবে এবং ফরয সালাত মোট কত ওয়াক্ত ও কত রাকাত সেটা আমরা রাসূলুল্লাহ থেকে জেনেছি। এই শিক্ষাটুকু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে না পেলে আমাদের পক্ষে কুরআন অনুসরণ সম্ভব হতো না।
আহলে কুরআনদের বিভ্রান্তি ও গোমরাহির অনেক বড় একটা প্রকাশক্ষেত্র হল সালাত। তাই এ বিষয়ে কিছু বলার ইচ্ছা করছি। সূরা বনী ইসরাঈলের এই আয়াতটি দেখুন-
اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیْلِ وَ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا.
(হে নবী!) সূর্য হেলার সময় সালাত কায়েম করুন রাত অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত এবং কায়েম করুন ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাতে ঘটে থাকে সমাবেশ। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৭৮
এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়-
এক. আল্লাহ তাআলা সালাত কায়েমের আদেশ করেছেন। তবে সালাত কায়েম কীভাবে করবে- তার বর্ণনা দেননি এবং কুরআন মাজীদের কোথাও দেননি। অথচ সূরা বাকারায় বলেন-
حٰفِظُوْا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوةِ الْوُسْطٰی وَ قُوْمُوْا لِلهِ قٰنِتِیْنَ، فَاِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا اَوْ رُكْبَانًا فَاِذَاۤ اَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ.
তোমরা পুরোপুরি যত্নবান থেকো সালাতসমূহের প্রতি এবং (বিশেষভাবে) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি২। তোমরা আল্লাহর সামনে আদবের সঙ্গে অনুগত হয়ে দাঁড়িয়ো। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় কর, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (সালাত আদায় করে নিয়ো)। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ অবস্থা লাভ কর তখন আল্লাহর যিকির সেইভাবে করবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৮-২৩৯
এখানে-
فَاِذَاۤ اَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ .
(অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ অবস্থা লাভ কর তখন আল্লাহর যিকির সেইভাবে করবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।)-অংশটি খেয়াল করুন। আগ-পর থেকে স্পষ্ট, এখানে যিকির বলতে যেকোনো যিকির উদ্দেশ্য নয়; বরং সালাত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ ভীতিকর পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে তোমরা দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করবে। এরপর পরিস্থিতি নিরাপদ হয়ে এলে তোমরা সেই নিয়মে সালাত আদায় করবে, যে নিয়ম তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, সে নিয়ম তো কুরআনে নেই; আমরা কোত্থেকে শিখলাম? আল্লাহ আমাদের কীভাবে শেখালেন? উত্তর স্পষ্ট, আমরা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি। তিনি তাঁর সুন্নাহ ও হাদীসের মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। রাসূলের এ শেখানোকেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘আল্লাহর শেখানো’। ইরশাদ হয়েছে- كَمَا عَلَّمَكُمْ অর্থাৎ যেভাবে আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো সালাতের পদ্ধতি থেকে বিমুখ হওয়া মানে আল্লাহর শেখানো পদ্ধতি থেকে বিমুখ হওয়া।
রাসূলুল্লাহর কাছে সালাতের পদ্ধতি সর্বপ্রথম শিখেছেন সাহাবায়ে কেরাম। তিনি তাঁদের মৌখিকভাবেও শিখিয়েছেন আবার নিয়মিত তাঁদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করে তার বাস্তব রূপও দেখিয়েছেন। আর বলেছেন-
صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي.
তোমরা সেইভাবে সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০০৮
এরপর সাহাবায়ে কেরাম থেকে তাবেয়ীন, তাঁদের থেকে তাবে তাবেয়ীন। এভাবে প্রত্যেক উত্তরসূরী তাদের পূর্বসূরীদের থেকে শিখেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।
শেখা-শেখানোর এই পন্থা কেবল সালাতেই নয়; অন্যান্য আমলেও ৩। যেমন হজ্বের বিষয়ে আল্লাহর হুকুম-
وَ لِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا.
মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর ফরয আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্ব করা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭
কিন্তু হজ্বের সম্পূর্ণ বিধান কুরআন মাজীদে নেই। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি যেন মানুষকে হজ্বের পূর্ণাঙ্গ বিধান শিক্ষা দেন। বিদায় হজ্বে তিনি বলেন-
لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ، فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَحُجّ بَعْدَ حَجّتِي هَذِهِ.
তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্বের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। কারণ আমি জানি না, এই হজ্বের পর আমি আর হজ্ব করতে পারব কি না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২৭৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৯৭০
দুই. এ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা মধ্যাহ্নের সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলার সময় থেকে রাত অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় কর। আয়াতের শাব্দিক অর্থ তো এমনই। এখন কেউ যদি রাসূলুল্লাহর ব্যাখ্যা ও সুন্নাহ ছেড়ে শুধু শাব্দিক তরজমা নিয়ে বসে থাকে,৪ তাকে তো সূর্য হেলার সময় থেকে রাত অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সালাতেই থাকতে হবে! এবার সূরা হুদের এই আয়াতটি দেখুন-
وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ طَرَفَیِ النَّهَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیْلِ اِنَّ الْحَسَنٰتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّاٰتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰی لِلذّٰكِرِیْنَ
(হে নবী!) আপনি দিনের উভয় প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে তাদের জন্য এটা এক উপদেশ।’ –সূরা হূদ (১১) : ১১৪
প্রশ্ন হল, কোন্ সালাতের নির্দিষ্ট সময় কতটুকু, যার আগে সালাত আদায় করলে তা ধর্তব্য হবে না আর তার পরে আদায় করলে যথাসময়ে সালাত আদায়কারী বিবেচিত হবে না? আমরা লক্ষ্য করেছি, বিষয়টা এই দুই আয়াতে নেই এবং কুরআন মাজীদের কোনো আয়াতে নেই। অথচ সূরা নিসায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
اِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.
নিঃসন্দেহে সালাত মুমিনদের উপর সময়াবদ্ধ ফরয। -সূরা নিসা (৪) : ১০৩
এই সময়াবদ্ধতার পরিপূর্ণ বিবরণ কুরআনে মাজীদে নেই; আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্য়। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা। তাঁর শেখানো ওয়াক্ত মোতাবেক সালাত আদায় করার বিষয়েই কুরআন বলছে-
اِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.
(নিঃসন্দেহে সালাত মুমিনদের উপর সময়াবদ্ধ ফরয।)
তাই রাসূলের শেখানো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা অমান্য করা মানে- কুরআনের এই ফরয বিধানের অবজ্ঞা করা। হাদীসে আছে, বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত-
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَهُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ، فَقَالَ لَهُ: صَلِّ مَعَنَا هَذَيْنِ – يَعْنِي الْيَوْمَيْنِ – فَلَمَّا زَالَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ، ثُمَّ أَمَرَهُ، فَأَقَامَ الظُّهْرَ، ثُمَّ أَمَرَهُ، فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ، فَلَمَّا أَنْ كَانَ الْيَوْمُ الثَّانِي أَمَرَهُ فَأَبْرَدَ بِالظُّهْرِ، فَأَبْرَدَ بِهَا، فَأَنْعَمَ أَنْ يُبْرِدَ بِهَا، وَصَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ أَخَّرَهَا فَوْقَ الَّذِي كَانَ، وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ، وَصَلَّى الْعِشَاءَ بَعْدَمَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، وَصَلَّى الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ بِهَا، ثُمَّ قَالَ: أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟ فَقَالَ الرَّجُلُ: أَنَا، يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: وَقْتُ صَلَاتِكُمْ بَيْنَ مَا رَأَيْتُمْ.
এক ব্যক্তি সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি এ দুদিন আমাদের সঙ্গে সালাত পড়’।
প্রথম দিন (মধ্যাহ্নের) সূর্য (কিছুটা পশ্চিমে) হেলে যাওয়ার পর বেলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযান দিলেন অতঃপর ইকামত দিলেন। এরপর সূর্য উপরে সাদা থাকাবস্থায়ই বিলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আসরের আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। এরপর সূর্যাস্তের পর মাগরিব এবং শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অস্তমিত হওয়ার পর এশার সালাত আদায় করলেন।
দ্বিতীয় দিন বেলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযানে বিলম্ব করলেন। রোদের তাপ অনেক ঠাণ্ডা হওয়ার পর যোহরের সালাত আদায় করা হল। এরপর আসরের সালাতও বিলম্বিত করা হল এবং সূর্য কিছুটা উচ্চতায় থাকাবস্থায় সালাত আদায় করা হল। এরপর মাগরিব শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অস্তমিত হওয়ার (কিছু) আগে আদায় করা হল এবং এশা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করা হল। ফজরের সালাত চারদিকে ভালোভাবে ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই প্রশ্নকারীকে ডাকলেন। সাহাবী উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই দুই সময়ের মধ্যেই তোমাদের সালাতের সময় নির্ধারিত।’ –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১৩
এছাড়াও আরো অনেক হাদীস ও আসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে সালাতের ওয়াক্ত সংক্রান্ত নির্দেশনা বর্ণিত রয়েছে।
বিখ্যাত মুফাসসির হাফিযুল হাদীস ইবনে কাসীর রাহ. (৭৭৪ হি.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৮ সংখ্যক আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَقَدْ ثَبَتَتِ السُّنَّةُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَاتُرًا مِنْ أَفْعَالِهِ وَأَقْوَالِهِ بِتَفَاصِيلَ هَذِهِ الْأَوْقَاتِ، عَلَى مَا عَلَيْهِ عَمَلُ أَهْلِ الْإِسْلَامِ الْيَوْمَ، مِمَّا تَلَقَّوْهُ خَلَفًا عَنْ سَلَفٍ، وَقَرْنًا بَعْدَ قَرْنٍ.
অর্থাৎ (সালাতের) এই ওয়াক্তগুলোর বিষয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত নিয়মটি নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (ফরয স্তরের) সুন্নাহ। এই সুন্নাহ তাঁর বহু কওলী ও ফে‘লী হাদীস দ্বারা তাওয়াতুরের সঙ্গে প্রমাণিত। যুগ যুগ ধরে তা মুসলিম উম্মাহ্র সম্মিলিত কর্মধারা। প্রত্যেক যুগের উত্তরসূরীরা তাদের পূর্বসূরীদের থেকে তা গ্রহণ করেছে। এভাবে আমলের ধারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৩, পৃ. ৮৯
কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নির্দেশ
সুতরাং পূর্বোল্লিখিত সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৮ সংখ্যক আয়াত এবং সূরা হূদের ১১৪ সংখ্যক আয়াতের কী অর্থ- সেটা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর মাধ্যমে বুঝতে পারলাম। অর্থাৎ সূর্য হেলার সময় থেকে রাত অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত এই পুরোটা সময় সালাতে থাকতে হবে না। বরং এটাকে চার ভাগ করা হয়েছে; অর্থাৎ চার ওয়াক্ত- যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। প্রত্যেক ওয়াক্তের শুরু-শেষ নির্ধারিত। পঞ্চম ওয়াক্ত ফজর। সেটা এই আয়াতে قُرْاٰنَ الْفَجْرِ শব্দে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বমোট পাঁচ ওয়াক্ত। আর সূরা হূদের আয়াতে, দিনের দুই প্রান্তের প্রথম প্রান্ত দ্বারা উদ্দেশ্য ফজর আর দ্বিতীয় প্রান্ত দ্বারা উদ্দেশ্য যোহর ও আসর। রাতের কিছু অংশ দ্বারা উদ্দেশ্য মাগরিব ও এশা- এই মোট পাঁচ ওয়াক্ত। অতএব এই দুই আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা কুরআন মাজীদের আরো আয়াতে আছে। যেমন সূরা রূমে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَسُبْحٰنَ اللهِ حِیْنَ تُمْسُوْنَ وَ حِیْنَ تُصْبِحُوْنَ، وَ لَهُ الْحَمْدُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ عَشِیًّا وَّ حِیْنَ تُظْهِرُوْنَ.
আয়াতের তরজমা এই-
তোমরা আল্লাহর তাসবীহতে রত থাক যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও এবং যখন তোমরা ভোরের সম্মুখীন হও। এবং তাঁরই প্রশংসা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে। বিকেল বেলায় (তাঁর তাসবীহতে রত হও) এবং যোহরের সময়। -সূরা রূম (৩০) : ১৭-১৮
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাত ভাই এবং তাঁর বিশিষ্ট সাহাবী। তাঁর জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন-
اللهُمّ عَلِّمْهُ الْكِتَابَ.
হে আল্লাহ, আপনি তাকে কুরআন শিখিয়ে দিন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৩৭৯
রাসূলের এই দুআ আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন। তাই তাঁর উপাধি ‘রঈসুল মুফাসসিরীন’-মুফাসসিরগণের সরদার। তিনি এই আয়াতে তাসবীহের ব্যাখ্যা করেছেন সালাত। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা কোন্ আয়াতে আছে? তিনি উত্তরে এই দুই আয়াত এবং সূরা নূরের ৫৮ সংখ্যক আয়াতের কিছু অংশ তিলাওয়াত করলেন, যাতে এশার সালাতের কথা আছে। আসারটি মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক (১৭৭২), আলমুজামুল কাবীর তবারানী (১০/২৪৭-২৪৮), তাফসীরে তবারী (১৮/৪৭৪), মুসতাদরাকে হাকেম (৩৫৮৩) ও সুনানে কুবরা বায়হাকী (৩/৩৫৯)সহ অনেক কিতাবে আছে। আমরা এখানে আসারটি মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক থেকে সনদসহ উল্লেখ করছি-
عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي رَزِينٍ قَالَ: خَاصَمَ نَافِعُ بْنُ الْأَزْرَقِ ابْنَ الْعَبَّاسِ، فَقَالَ: هَلْ تَجِد الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ فِي الْقُرْآنِ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، ثُمَّ قَرَأَ عَلَيْهِ: فَسُبْحٰنَ اللهِ حِیْنَ تُمْسُوْنَ وَ حِیْنَ تُصْبِحُوْن: الْمَغْرِبُ وَالْفَجْرُ، وَ عَشِیًّا: الْعَصْرُ، وَّ حِیْنَ تُظْهِرُوْنَ : الظُّهْرُ، قَالَ: وَ مِنْۢ بَعْدِ صَلٰوةِ الْعِشَآء.
অর্থাৎ নাফে‘ ইবনে আযরাক নামক এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা পেয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। এরপর তিলাওয়াত করলেন, فَسُبْحٰنَ اللهِ حِیْنَ تُمْسُوْنَ وَ حِیْنَ تُصْبِحُوْنَ (অর্থাৎ) মাগরিব ও ফজর, ‘ وَ عَشِیًّا’ : আসর, ‘وَّ حِیْنَ تُظْهِرُوْنَ’ : যোহর। এরপর তিলাওয়াত করলেন, وَ مِنْۢ بَعْدِ صَلٰوةِ الْعِشَآء (অর্থাৎ এশা)। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, খ. ১, পৃ. ৪৫৪, হাদীস ১৭৭২
قال الحاكم في المستدرك: هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه.
অতএব এখানে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিবরণ পেলাম। حِیْنَ تُمْسُوْنَ -এ মাগরিব ও এশা, وَ حِیْنَ تُصْبِحُوْنَ –এ ফজর, وَ عَشِیًّا –এ আসর এবং وَ حِیْنَ تُظْهِرُوْنَ -এ যোহর- এই মোট পাঁচ ওয়াক্ত।
সূরা রূমের আয়াতের অনুরূপ আয়াত আছে সূরা ত্ব-হায়। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন-
فَاصْبِرْ عَلٰی مَا یَقُوْلُوْنَ وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا وَ مِنْ اٰنَآئِ الَّیْلِ فَسَبِّحْ وَ اَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰی.
সুতরাং (হে নবী!) তারা যেসব কথা বলে, তাতে সবর করুন। আর সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ ও হামদে রত থাকুন। রাতের মুহূর্তগুলোতেও তাসবীহতে রত থাকুন এবং দিনের প্রান্তসমূহেও, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। -সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩০
এখানে তাসবীহ ও হামদের কী অর্থ? জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، فَقَالَ: أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ، لَا تُضَامَّونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا – يَعْنِي الْعَصْرَ وَالْفَجْرَ -، ثُمَّ قَرَأَ جَرِيرٌ وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا.
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, শোন! অচিরেই তোমাদের রবকে তোমরা দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে গিয়ে তোমরা পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা সক্ষম হও তবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে সালাত আদায়ে পিছপা হয়ো না। অর্থাৎ আসর ও ফজর। এরপর জারীর রা. তিলাওয়াত করলেন-
وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا
(আর সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ ও হামদে রত থাকুন।) -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৪
এখানে এটা স্পষ্ট, বিখ্যাত সাহাবী জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. তাসবীহ ও হামদ শব্দ থেকে সালাত অর্থই বুঝেছেন। তাছাড়া আরবী ভাষায় এ ধরনের ব্যবহার অপরিচিত কিছু নয়। একটি সমগ্রের অংশবিশেষ উল্লেখ করে পুরো সমগ্রটিকে বোঝানো- এটি আরবী ভাষায় অতি পরিচিত একটি রীতি। কুরআন মাজীদেই এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে, এমনকি সালাতের ক্ষেত্রেই। যেমন ইতিপূর্বে আমরা সূরা বাকারার ২৩৯ সংখ্যক আয়াতে দেখেছি; সেখানে যিকির শব্দটি সালাতের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আরো কিছু আয়াত দেখুন-
وَ الَّذِیْنَ یَبِیْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا.
এবং যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনও) সিজদারত অবস্থায় এবং (কখনও) দণ্ডায়মান অবস্থায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৪
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیْلِ سَاجِدًا وَّ قَآىِٕمًا…
যে রাতের মুহূর্তগুলোতে ইবাদত করে, (কখনও) সিজদাবস্থায় এবং (কখনও) দাঁড়িয়ে…। -সূরা যুমার (৩৯) : ০৯
وَ اِذْ بَوَّاْنَا لِاِبْرٰهِیْمَ مَكَانَ الْبَیْتِ اَنْ لَّا تُشْرِكْ بِیْ شَیْـًٔا وَّ طَهِّرْ بَیْتِیَ لِلطَّآىِٕفِیْنَ وَ الْقَآىِٕمِیْنَ وَ الرُّكَّعِ السُّجُوْدِ.
এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সেই ঘর (অর্থাৎ কাবাগৃহ)-এর স্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। (এবং তাঁকে হুকুম দিয়েছিলাম,) আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করবেন না এবং আমার ঘরকে সেইসকল লোকের জন্য পবিত্র রাখুন, যারা (এখানে) তওয়াফ করে, দাঁড়ায় ও রুকূ-সিজদা করে। -সূরা হজ্ব (২২) : ২৬
এই আয়াতসমূহে দাঁড়ানো ও রুকূ-সিজদার কথা আছে। কিন্তু স্পষ্ট, এখানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা বা রুকূ-সিজদা করা উদ্দেশ্য নয়; বরং পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায় করাই উদ্দেশ্য।
সুতরাং প্রতীয়মান হল, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা কুরআন মাজীদে আছে। একসঙ্গেও আছে, যেমন সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৮ সংখ্যক আয়াতে ও সূরা হূদ-এর ১১৪ সংখ্যক আয়াতে। আবার আলাদাভাবেও দু-এক ওয়াক্তের কথাও আছে, যেমন সূরা নূরের ৭৮ সংখ্যক আয়াতে এশার সালাতের কথা আর সূরা বাকারার ২৩৮ সংখ্যক আয়াতে আসরের সালাতের কথা।
এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তিনি উম্মতকে এদের বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছেন। মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَلاَ هَلْ عَسَى رَجُلٌ يَبْلُغُهُ الحَدِيثُ عَنِّي وَهُوَ مُتَّكِئٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ، فَيَقُولُ: بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللهِ، فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَلاَلاً اسْتَحْلَلْنَاهُ. وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَرَامًا حَرَّمْنَاهُ، وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللهِ كَمَا حَرَّمَ اللهُ.
শুনে রাখ! হয়ত এমন ব্যক্তির উদ্ভব হবে যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে; তখন তার কাছে আমার কোনো হাদীস পৌঁছলে সে বলে উঠবে, আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাবই আছে। এতে আমরা যা হালাল হিসেবে পাব তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করব আর যা হারাম হিসেবে পাব তা হারাম মনে করব। অথচ (প্রকৃত অবস্থা হল এই যে,) রাসূলুল্লাহ যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতই হারাম। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১২
আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ اِنَّ اللهَ یُضِلُّ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَهْدِیْۤ اِلَیْهِ مَنْ اَنَابَ.
(হে নবী!) আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন আর তাঁর পথে কেবল তাকেই আনয়ন করেন, যে (তাঁর) অভিমুখী হয়। -সূরা রা‘দ (১৩) ২৭
তাই কুরআনের এই দুআটি আমরা বেশি বেশি পাঠ করি-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.
হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছেন, তারপর আর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনিই মহাদাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯
আর যারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়েছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। হাতে-পায়ে ধরে হলেও বোঝাই। দেখুন, বিষয়টা অনেক গুরুতর। কিছু বিষয় এমন, যাতে দলীলের আলোকে ইমামগণের মাঝে একাধিক মত হতে পারে। এটা সে ধরনের বিষয় নয়। এটা তো ঈমান-কুফরের বিষয়। এটা ঈমান আর ওটা কুফর। এটা হেদায়েত আর ওটা গোমরাহী। কিন্তু তারা ভুল বুঝেছে অথবা কেউ তাদের কুমন্ত্রণা দিয়েছে; কোনো একটা সমস্যা তাদের হয়েছে। সেজন্য হাতে-পায়ে ধরে হলেও তাদের ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। দুআ করতে হবে, বোঝাতে হবে এবং আলেম-উলামার মজলিসে নিয়ে যেতে হবে। এরপর তারা নিজেরাও যদি নিজেদের জন্য দুআ করেন এবং সত্যটা বোঝার চেষ্টা করেন, আশা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের হেদায়েত দান করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল রাখুন- আমীন।
লেখকঃ কলেজ শিক্ষক