দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টি বিপরীতধর্মী শব্দ কিন্তু মানব জীবনে এ দু’টিই জড়িয়ে আছে অন্ধকার এবং আলোর মত। এইতো প্রাচুর্যের ছন্দময় উপস্থিতি আবার কিছু সময় পরই দারিদ্রের সেই অনাকাংখিত ভয়াল থাবা। কারো কারো জন্য আছে আলীশান বাড়ী। বিলাম বহুল গাড়ীসহ সুখের সব রকম সরঞ্জামাদির বিপুল সমাহার। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি পরিশ্রমের পরও দু’মুঠু ভাতের নিশ্চয়তা নেই, নেই মাথা গোজার একটু ঠাঁই। দু’টি অবস্থাই প্রজ্ঞাময় মহামহীমের রহমতায় সৃষ্টি।ইবাদতের দু’টি অনুপাত ধারা সৃষ্টিই এর মুল রহস্য। একটি সবর অন্যটি শুকর। দু’টিই আল্লাহ তাআালার বিশেষ ইবাদাত।
যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত। ইসলামের অন্যান্য মূল স্তম্ভের মতই যাকাত ফরয। আভিধানিক অর্থে যাকাতের অর্থ হল, বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধতা ইত্যাদি। যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ হয় এবং মালের পবিত্রতা ও বরকত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ’র অসন্তুষ্টি ও গযব হতে সমাজ মুক্ত ও পবিত্র হয়। অপরদিকে শরয়ী পরিভাষায় জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন মিটানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর কাল সঞ্চিত থাকলে, শরীয়ত নির্ধারিত পরিমাণ মোতাবেক অংশ শরীয়ত নির্ধারিত খাতে কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া মালিকানা হস্তান্তরকে যাকাত বলে। পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে সালাত-যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰
‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাকারা: ১১০)
অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۵۶
‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’(সূরা নূর: ৫৬)
সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘মহাপুরস্কার’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে-
وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲
‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’
অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۱۰۳
‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’(সূরা তাওবা: ১০৩)
যাকাত হল আর্থিক ইবাদত। আর্থিক ইবাদতের মধ্যে যাকাতের গুরুত্ব সর্বাধিক। নামাযের মতই এটি ফরয। কুরআন ও হাদীসে যাকাত প্রদানের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, “নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়।” (সূরা বাক্বারাহ্ ৪৩)। “নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।” (সূরা নূর- ৫৬)। “নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে, এটাই সঠিক ধর্ম।” (সূরা বাইয়্যিনাহ-৫)। রাসূল (সঃ)বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা ধনীদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। যাতে ধনীদের নিকট হতে সংগ্রহ করে দরিদ্রের মধ্যে বণ্টন করা হয়।” (সহিহ বুখারী)।
যাকাত প্রদানের বিধান পূর্ববর্তী নবীগণের আমলেও ছিল এবং বর্তমানেও আছে। যাকাত প্রদান না করার জন্য পরকালে কঠোর ও ভীষণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। একজন সাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি বর্তমান বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবে যে, দারিদ্রের কারণে প্রায়ই জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে দেখা যায়।বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করছে একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ।যে শিশু শিশুনিকেতনের আলোকময় পরিবেশে থেকে নিজকে আলোকিত মানুষ রূপে গড়ে তোলার কথা ছিল দারিদ্রের কারণে আজ তাকে দেখা যাচ্ছে হাটে, রাস্তায়, ষ্টেশনে,, শ্রমবিক্রি করতে ব্যস্ত এদের কেউ কেউ ভিক্ষা করছে আবার অনেককে নর্দমা, ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেয়া খাবার ও তুলে খেতে দেখা যাচ্ছে।দারিদ্রের কারণে অশিক্ষিত রয়ে যাচ্ছে সমাজের একটি বিশাল অংশ যার কারণে বেকারত্ব বাড়ছে আলোর গতিতে। দারিদ্র ও বেকারত্বের অমানিশায় পতিত হয়ে হতাশা কাটানোর জন্যে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি খুনসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে সম্ভামনাময় নবপ্রজন্ম। এসব অপরাধ বাড়ার কারণে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে আতংক, কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে নাগরিক জীবন যাপন, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ যাবতীয় উন্নয়ন। অগ্রগতি বাধা গ্রস্থ হচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক ভাবে নিন্দিত হচ্ছে দেশ ও জনগন। সুদ ভিত্তিক দেশীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে সর্বস্বাস্থ হতে দেখা যাচ্ছে জনগণকে। সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ভিটে মাটি বিক্রি করে বাস্তুহারার কাতারে শামিল হতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে।নিয়মিত যাকাত আদায় করে সুষ্ঠভাবে বন্টন করলে উপরোক্ত সবগুলো ক্ষেত্রে অবদান রাখা যায়। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ প্রকৃতিগত। সম্পদ উপার্জনে মানুষ আগ্রহ বোধ করে কিন্তু ব্যয়ের ব্যাপারে অনুরূপ সাচ্ছন্দ অনুভব করে না। আর সাহায্য সহানুভূতি ও দান খয়রাত রীতিমত মনের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রাম। এক্ষেত্রে যাকাত আদায়চ্ছু ব্যক্তি যদি যাকাত আদায়ে শরীয়তের বিধান স্মরণে আনে তাহলে তার জন্য উক্ত কাজে সফল হওয়া সহজ হবে।
পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিরাট বৈষম্য দেখা যায়। ইসলাম যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের ব্যবস্থা করেছে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি মেনে চললে মানব সমাজে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকতে পারে না। আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্রের যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তা কেবল পুরোপুরি ইসলামী অর্থব্যবস্থা না মানার কারণে। যেসব লোক নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী, তারা যদি নির্ধারিত নিয়মে সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করে, তাহলে সমাজের ধনী-দরিদ্রের এই বিরাট বৈষম্য থাকতে পারে না। তাই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে ইসলামের যাকাত-সাদকা, ফিতরা, দান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ধনীদের সম্পদে বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। আর যাকাতের হকদার হল, দুঃস্থ, গরীব, মিসকীন-অসহায় মানুষ। কিন্তু তাই বলে তাদের প্রতি ধনীদের এটা অনুগ্রহ নয়। কারণ, আল্লাহ্ তাআলা যাকাত ফরয করার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদে গরীবদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ ধনীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, যারা যাকাতের হকদার তাদের নিকট পৌঁছে দেওয়া। কাজেই যাকাত হল, ধনীদের সম্পদের গরীবদের একটি অংশ, যা প্রদান করা অপরিহার্য।
মানব সমাজের বিরাট অংশ দরিদ্র। এই দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা একটি কার্যকর পন্থা। শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা মুসলিম জাহানের মুসলমানের বিরাট অংশ আজ দারিদ্রতার শিকার। আর এই দারিদ্রতা বিমোচনের ক্ষেত্রে যাকাত ব্যবস্থার অবদান অনস্বীকার্য। বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত নিয়মে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হলে, দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পুঁজিপতি বা ধনী ব্যক্তিরা উপার্জিত অর্থের একাংশ ভবিষ্যত জীবনের জন্য সঞ্চিত করে রাখে। কিন্তু দুঃখী, দরিদ্র, সর্বহারা মানুষের পক্ষে ভবিষ্যতের সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না। কারণ তারা অভাব-অনটনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করে। এসব গরীব-দুঃখী-অসহায় মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর ব্যবস্থা করা কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব। মহানবী (সা)শান্তিময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেন, “আমি তোমাদের অভিভাবক, যাদের কোন অভিভাবক নেই।” হযরত উমর (রাযি.) তাঁর শাসনামলে বলেন, “আমার শাসনে ফুরাতের উপকূলে একটি ছাগল ছানাও যদি না খেয়ে মারা যায়, তবে আল্লাহর আদালতে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।” কাজেই গরীব-অসহায় মানুষের দুঃখী জীবনের অবসান ঘটাতে ইসলামের যাকাতের বিধান একটি উত্তম ও কার্যকর পন্থা।
ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করে এসব অসহায় মানুষের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মিসকীন, দাস মুক্তি, ঋণগ্রস্তদের ঋণ মুক্তি, মুসাফিরসহ সকল অসহায় ও দুঃস্থদের পুনর্বাসনে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পাশাপাশি যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনীদের পরকালীন জীবন সুখ-শান্তিময় হবে। যাদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ও ঘরবাড়ী থেকে বহিস্কৃত করা হয়, সেসব উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনেও যাকাত ব্যবস্থা অবদান রেখেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “যাকাতের অর্থ সেসব দুঃস্থ মুহাজিরদের জন্য, যাদেরকে তাদের ঘরবাড়ী ও ধন-সম্পদ হতে বহিস্কৃত করা হয়েছে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সব কিছু ত্যাগ করেছে।” (সূরা হাশর)। যারা আল্লাহ্ তাআলার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সার্বক্ষণিকভাবে নিজেকে নিয়োজিত রাখার কারণে জীবিকা নির্বাহ করার মত প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারে না, আবার অপরের নিকট চাইতেও পারে না, তাদেরকে সাহায্যের ক্ষেত্রেও যাকাত ব্যবস্থার অবদান অনস্বীকার্য। তাছাড়া যারা অর্থ সঙ্কট জনিত কারণে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, বিশেষ করে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা করার ব্যাপারে যাকাত ব্যবস্থার যথেষ্ট অবদান আছে। যেসব মক্তব, মাদ্রাসায় গরীব ছাত্রদেরকে বিনা বেতনে শিক্ষা দেওয়া হয়, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ের এক মাত্র উৎস হল, জনসাধারণের দান, যাকাত, ফিতরা, সাদকা ইত্যাদি। কাজেই এক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ যথেষ্ট অবদান রাখছে। তাছাড়াও ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে অবদান রাখতে সক্ষম, যা একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী সমাজ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সহায়ক।
প্রতিটি নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তির নিকট থেকে সঠিকভাবে ইসলামী বিধান মোতাবেক যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করে সে অর্থে শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের তহবিল যোগান ইত্যাদির মাধ্যমে অসহায় বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কর্মক্ষম গরীব, মিসকীন, দুঃখী মানুষকে এসব কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাছাড়াও যাকাতের অর্থে রিকশা, ভ্যানগাড়ী, ঠেলাগাড়ী ইত্যাদি ক্রয় করে দরিদ্র, দুঃস্থ এতীম, মিসকীন, সর্বহারা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে অর্থ উপার্জনের পথ করে দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকার জনকল্যাণমূলক কাজ, যা একটি সমৃদ্ধশালী সমাজ ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক সেসব ক্ষেত্রে এ অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। অতএব, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার অবদান যথেষ্ট এবং অনস্বীকার্য। আর এ ব্যবস্থা কার্যকর করার ব্যাপারে শাসক শ্রেণী ও জনসাধারণ উভয়ের প্রচেষ্টা একান্ত কাম্য।
আল্লাহর দেয়া রিজিক তাঁর বান্দাদের প্রয়োজনে, তাঁর দ্বীনের প্রয়োজনে উদার হস্তে আমরা খরচ করি এবং কতো খরচ করছি তা হিসাব না করি তা হলে আল্লাহও আমাদেরকে উদার হস্তে দান করবেন।পরিশেষে, উপরের আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ্ তাআলা নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের মালিকদের উপর যাকাত ফরয করেছেন এবং নির্ধারিত হারে যাকাত প্রদান করা অপরিহার্য। আর যাকাত আদায় না করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যাকাতের অর্থ দরিদ্র, দুঃস্থ, ফকীর, মিসকীন, অসহায় মানুষের প্রাপ্য। আর এসব মানুষের দারিদ্রতা বিমোচন ও পুনর্বাসনে ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে আল্লাহপাক আমাদেরকে সকল সংকীর্ণতার ঊর্দ্ধে উঠে হিসাব করে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়ভাজন বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন,প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,আতাকরা কলেজ,কুমিল্লা, বাংলাদেশ ।।