1. [email protected] : thebanglatribune :
ক্ষমা ইসলামের একটি অন্যতম সৌন্দর্য্যঃ মোঃ কামাল উদ্দিন - The Bangla Tribune
মার্চ ২৯, ২০২৪ | ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

ক্ষমা ইসলামের একটি অন্যতম সৌন্দর্য্যঃ মোঃ কামাল উদ্দিন

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, জানুয়ারি ৯, ২০২৩

দি বাংলা ট্রিবিউন: মানব জীবন হাজারো বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। এখানে একদিকে রয়েছে ভালোবাসা প্রীতি, মমত্ববোধ, করুণা, ক্ষমাসহ কতিপয় সদাচরণ অন্যদিকে রয়েছে ঘৃণা, হিংসা-দ্বেষ, রাগ, অহংকারসহ অসংখ্য অসদাচরণ। মানবের চারিত্রিক জীবনের ভালো দিকগুলোকে বলা হয় আখলাকে হাসানা আর খারাপ বা মন্দ দিকগুলোকে বলা হয় আখলাকে যামিমাহ। একটি আদর্শ ও মহৎ চরিত্রভাবনা কল্পনা করলে সব থেকে প্রথম যে বিষয়গুলো আসে তার অন্যতম হলো ক্ষমা। মহান আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলির অন্যতম একটি গুণ হলো ক্ষমাশীলতা। দয়া ও ক্ষমা, ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য্য এবং মানুষের অন্যতম মহৎ গুণ। এই গুণ একজন মানুষকে কেবল মহান হিসাবে পরিচিত করে না বরং তিনি অন্যের কাছে হয়ে উঠেন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। হিংসা, অহঙ্কার, ক্রোধ, জিদ, রাগ কিংবা উত্তেজনা মানুষকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু কাউকে ক্ষমা করলে কিংবা কারও প্রতি উদারতা প্রদর্শন করলে, মহান আল্লাহ ওই ক্ষমাশীল ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সম্বরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর মহান আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:১৩৪)

মতানৈক্য ও মতবিরোধকে কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মহান আল্লাহ মানুষকে একে অপরকে ক্ষমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান’ (সুরা নিসা:১৪৯)। ক্ষমাশীল ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার পাবেন। যে ব্যক্তি পরস্পরের মধ্যে বিরোধ নিষ্পন্ন করে দেয়, তিনি মহান আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্প ত্তি করে, তার পুরস্কার মহান আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয় মহান আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না’ (সুরা শুরা:৪০)।

ক্ষমা করলে কারও মর্যাদা কমে না। বরং বহু গুণে ক্ষমাশীল ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না আর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, মহান আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন” (মুসলিম, হাদিস:২৫৮৮)। উদারতা ও সহিষ্ণুতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কোমলতা ও হৃদয়ার্দ্রতা মুমিনদের বিশেষ একটি গুণ। মহানবী (সা.) যখন সাহাবি মুয়াজ (রা.) ও মুসা (রা.) কে ইয়ামেনে প্রেরণ করেন তখন এ আদেশ দেন যে,লোকদের প্রতি কোমলতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুখবর দেবে, ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর একমত হবে, মতভেদ করবে না’ (বুখারি, হাদিস:৩০৩৮) ।উক্ত হাদিসে ক্ষমা ও দয়ার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। আজকাল আমরা সামান্য বিষয় নিয়ে যদি কারো সাথে বিরোধ হয়।আমরা অনেকে এর প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করি, ক্ষমা করতে চাই না।অথচ এটি মুমিন এর কাজ নয়।মুমিন এর কাজ হলো যখন কোন বিরোধ দেখা দিবে তখন বিনয়ের সাথে সমাধানে চেষ্টা করা উত্তম হল ক্ষমা করে দেয়া।

মহানবী (স) বলেন ‘যে বান্দা অত্যাচারিত হয়েও জালিমকে ক্ষমা করে দেয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন’। মহানবী (স) প্রচুর আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, যখন তাঁকে অপমান, অপদস্থ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। রাগ নিয়ন্ত্রণ মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। মহানবী (স) বলেন,’যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন'(ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। মহানবী (স)আরও বলেন, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই’ (ইবনে মাজাহ:৪১৮৯)।এক ব্যক্তি মহানবী (স)-কে বললেন,’আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। মহানবী (স) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না” (সহিহ বুখারি, খ-:৮, অধ্যায়:৭৩, হাদিস:১৩৭)।

এ ছাড়া মহানবী (স)-এর জীবন থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা দেখতে পাই, যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, যখন রাগ আমাদের গ্রাস করতে চায় কিংবা আমরা রাগান্বিত অবস্থায় থাকি, তখন আমাদের কী করা উচিত। মহানবী (স)বলেন,’যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া’ (তিরমিজি)। মহানবী (স) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরও বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। মহানবী (স) বলেন,’রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা’ (আবু দাউদ)। মহানবী (স)বলেন,’আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। আর তা হলো “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়:৩২, হাদিস:৬৩১৭)।

জীবনের এক কঠিনতম সময়ে আমাদের প্রিয় মহানবী (স) তায়েফে গিয়েছিলেন, আশা করেছিলেন তায়েফবাসী তাঁর কথা শুনবে, তাঁকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি পেলেন অপমান। তাঁর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পায়ে গিয়ে জমাট বাঁধল। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একজন ফেরেশতা এলেন। ফেরেশতা তায়েফের দুপাশের পাহাড় এক করে দিয়ে তায়েফবাসীকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু মহানবী (স)এর উত্তর ছিল,না, তা হতে পারে না। বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশে এমন সন্তান দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না’ (সহিহ বুখারি, খ-:৪, অধ্যায়:৫৪,হাদিস:৪৫৪)। মহানবী (স) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো। তাঁরা উত্তর দিলেন, যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে। মহানবী (স)বললেন, ‘ সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় (সহিহ বুখারি: ৫৬৮৪)।

সংসার ও সমাজ জীবনে মানুষ একে অপরের রূঢ় বা কটু কথাবার্তা কিংবা আচার-আচরণের বিনিময়ে মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন। রূঢ় আচরণকে কেন্দ্র করে একে অপরের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়। পরিবারিক, সামাজিক ও জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এমন হলে, মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া। পারস্পরিক ভুল- ত্রুটিগুলোকে সংশোধন করে দেওয়া। এতে সম্পর্ক ও বন্ধন আরো মজবুত ও অটুট হয়। নতুন বছরে আমাদের সবার এই হোক বন্ধনা যে আমরা সকলে পরস্পরের প্রতি রাগ ক্রোধ ও ব্যক্তিগত খারাপ আচরণ ভুলে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব এবং দেশের কল্যাণে কাজ করে সোনার বাংলা বিনির্মাণে চেষ্টা করবো এবং পরস্পর ক্ষমাশীল হবো। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমাশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ  প্রভাষক: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আতাকরা কলেজ, কুমিল্লা

ইমেইলঃ [email protected]

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020