1. [email protected] : thebanglatribune :
  2. [email protected] : James Rollner : James Rollner
বর্ষার আগমনি বার্তায় গহীনের শব্দমালা ও মৌসুমের ঘূর্ণায়মান -মোঃ হাবিবুর রহমান - The Bangla Tribune
এপ্রিল ২০, ২০২৪ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

বর্ষার আগমনি বার্তায় গহীনের শব্দমালা ও মৌসুমের ঘূর্ণায়মান –মোঃ হাবিবুর রহমান

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, নভেম্বর ২৩, ২০২২

এ জনপদে এক সময় ছয় ঋতুর প্রচলন থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব সমাজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তা পশ্চিমা বিশ্বের মতো দুইটি ঋতুতে রূপান্তির হয়েছে। গ্রীষ্মের সময় খুবই গরম, আবার শীতের সময় প্রচন্ড ঠাণ্ডা। কবি ও সাহিত্যিকদের নিকট এক এক ঋতু একেকভাবে বিশ্লেষিত হয়।

কেউ শীত নিয়ে লেখালেখি করেন। আবার কেউ বা গ্রীষ্মের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। আজকের লেখাটি বর্ষা কালকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। এছাড়াও লেখক ও কবিদের ভাবের আদান-প্রদানের বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে।

কদম ফুল ও কেতকী ফোটার মাধ্যমে বর্ষাকালের আভাস পাওয়া যায়। কাগজে কলমে বর্ষা ঋতু পহেলা আষাঢ় শুরু হলেও বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বাংলার জনপদ বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর থাকে। কোথাও বন্যা আবার কোথাও বৃষ্টির পানিতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বর্ষার আগমনি বার্তা, প্রকৃতি অপরূপ ও নান্দনিকতা দেখে লেখক, কবি, আলোকচিত্রকর ও গবেষকদের মনের ক্যানভাসকে আলোড়িত করছে। এ বর্ষাকে বরণ করার যেমন অনুভূতি অন্যরকম তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মানব জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। যদিও আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে মানব সমাজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অনেকাংশে দায়ী বলে সংশ্লিষ্টজন মনে করে।

আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকালের ব্যাপ্তি হলেও বাংলার জনপদে এ ঋতু বারবার উঁকি দেয়। বর্ষা ও আষাঢ় এলে অনেক কবি ও লেখকদের পংক্তি আমাদের মনকে উদ্বেলিত করে। প্রীতি, স্নেহ, জাগরণের গান, নতুন প্রাণ সঞ্চার ইত্যাদি বর্ষা, মেঘ, ও বৃষ্টিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। মনের মনিকোঠায় গুনগুন করে নজরুলগীতি-বরষা এলো ঔ বরষা। বর্ষা ও আষাঢ় নিয়ে কবি, লেখকদের নানা পংক্তি রয়েছে। যেমন কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, এই জল ভালো লাগে:- বৃষ্টির রুপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ.. .। নতুবা রবীন্দ্র সংগীত- আবার এসেছে আষাঢ়। বর্ষার ভারি বৃষ্টি ও রিমঝিম বৃষ্টি, সাধারণ মানুষ, সাহিত্যিক ও কবিদের চিন্তার জগৎ নতুনভাবে প্রসারিত করে। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, . . . বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল..।

উদীয়মান ও তারুণ্যের কবি নাদিরা ইসলাম নাইস দূরত্বের হৃৎপিণ্ডে প্রেমের স্পন্দন (২০২১) কাব্যগ্রন্থের শ্রাবণ কন্যা কবিতায় লিখেছেন, “শ্রাবণ নীরদের মাতাল কুঞ্চ অন্তরীক্ষ বক্ষে, আজ মেঘেদের ধুম লেগেছে ওড়াউড়ির পক্ষে”। এছাড়াও তিনি যতিচিহ্নে জীবন (২০২২) নামক কাব্যগ্রন্থের অপর প্রান্তে বর্ষা কবিতায় লিখিছেন, “বরষার মুখরিত আওয়াজে আজ, কেউবা মেতেছে বর্ষা মৌসুমের নৃত্যে।”

বৃষ্টির কারণে যেমন আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে অফুরন্ত কল্যাণ বয়ে আনে। তেমনি অতি বৃষ্টি আমাদের জন্যে অকল্যাণ ও নেতিবাচন প্রভাব বয়ে আনে। নাব্যতার সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি বিষয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টির কারণে বর্ষাকালে নদী, সাগর, খাল-বিল আপন রূপে ফিরে আসে। সৃষ্টি হয় উত্তাল ঢেউয়ের। পানির কলতান ও নদীর শোঁশোঁ শব্দে শিহরিত হয়। বর্ষাকালে মানব সমাজ নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদন শেষে কিছু মানুষ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে নিজেদের অন্তর্ভূক্ত করে। কেউ বা লেখালেখি, কেউ বা  হস্তশিল্পের কাজ ও নকশিকাঁথার ফুল তোলে। কেউ বা বর্ষার অপরূপদৃশ্য দেখে তা ক্যামেরায় ধারণ করে। কেউ বা চিন্তার জগৎতে আরো পরিস্ফূটিত করে।

এ বর্ষার শুরুতে সংশ্লিষ্ট গবেষক, কবি ও লেখকদের সাথে ভালোই সময় কাটানো যায়। নিজেদের প্রকাশিত লেখার আদান প্রদান করা হয়। লেখক, কবি ও গবেষকগণ সাধারণত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে তাঁদের চিন্তা ও চেতনা পাঠকদের নিকট তুলে ধরেন। কবি নাদিরা ইসলাম নাইস লিখিত দূরত্বের হৃৎপিণ্ডে প্রেমের স্পন্দন (২০২১) এবং যতিচিহ্নে জীবন (২০২২)। এ সকল কবিতায় তিনি নিরোহের কথা, ভালোবাসা, বাংলার সংস্কৃতি ও পিতৃস্নেহ ইত্যাদি বিষয়কে কবিতার মায়াজালে আবদ্ধ করে বিভিন্ন ছন্দে শব্দমালাকে সাঁজিয়েছেন। পাঠকদের ভালোবাসায় উজ্জীবিত হোক প্রকাশনাগুলো। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। নতুন নতুন কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও গবেষণাধর্মীর উপহার পাবো, এই প্রত্যাশা করছি। সবাইকে বর্ষার শুরুতে কদম ফুল ও কেতকীর শুভেচ্ছা জানাই।  যদিও এখন শীতকাল , তথাপি বর্ষা কালের স্মৃতির ভুলবার নয়। আপনজন হারিয়ে গেলে যেমন তার অনুপস্থিতিটা ভীষণ মনে পড়ে। তেমনি বর্ষা বিহীন এ কেমন শূন্যতা ও গহীনের আওয়াজ। এ হিম ও নিদাঘের বৈরিতায় গহীনের শব্দমালা উঁকি দিচ্ছে, প্রিয়ার অনুপস্থিতিতে। পরিশেষে বলা যায়,

 

হিমালয় নন্দিনীর লোচনে হঠাৎ জলতরঙ্গ

তুহিনের ক্ষয়ে ক্ষাণিকটা বিচলিত গিরির শৃঙ্গ

কথার স্রোতে অচলায়তনের পদধ্বনি ও বহ্নির শিখা

শীতের চাদরে মোড়ানো জনপদ ও তোমার রাজগৃহ

ঋতুর ঘূর্ণায়মানে হরিষে বিষাদ ও গহীনের শব্দমালা

হিম ও নিদাঘের বৈরিতায় টালমাটাল এ বসুমতীর আঁচল।

 

লেখক-

কবি, লেখক ও গবেষক,

ই-মেইল: [email protected]

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020