1. [email protected] : thebanglatribune :
  2. [email protected] : James Rollner : James Rollner
আল কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্বঃ মোঃ কামাল উদ্দিন - The Bangla Tribune
এপ্রিল ২০, ২০২৪ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

আল কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্বঃ মোঃ কামাল উদ্দিন

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, অক্টোবর ৫, ২০২২
লেখকঃ মোঃ কামাল উদ্দিন

ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা।আর মিলাদ ও নবী দুটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে মিলাদুন্নবী বলা হয়। আর নবী শব্দ দ্বারা রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) কে বোঝানো হয়েছে। এক কথায়, ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর পবিত্র বেলাদত শরিফ উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করা।

আর পরিভাষায় বললে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর শুভাগমন স্মরণে খুশি প্রকাশ করে মিলাদ শরিফ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা আলোচনা করা, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, জন্মকালীন ঘটনা মজলিস করে আলোচনা করা, প্রশংসামূলক কবিতা, ওয়াজ-নসিহত, দোয়া-মোনাজাত, সম্ভব মতো মেহমান নেওয়াজির সমাপ্তি অনুষ্ঠান করা।

মহানবী (সা.) এর জন্মদিন সম্পর্কে আল কোরআনে আলোচনা করা হয়নি। কিন্তু হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) এর জন্মকাল সম্পর্কে জানা যায়। হজরত আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি (মুসলিম)। রাসূল (সা.) ৫৭০ খ্রি. রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। নবী করীম (সা.) সোমবার রোজা রেখে নিজের জন্মদিন স্মরণ করতেন। এর দ্বারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। কোরআন মজিদ থেকে কয়েকটি দলিল পেশ করা হলো, যাতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলগণের জন্ম ও পরলোকগমন দিবস স্মরণ করার হুকুম দিয়েছেন।

আল কুরআনের আলোকে মিলাদ

 হে রাসূল (সা.) আপনি বলুন আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর করুণা এতে যেন তারা আনন্দিত হয়। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে, যা তারা সঞ্চয় করেছে (সূরা ইউনুস: ৫৮)। এ সম্পর্কে তাফসিরে তাবারি, রুহুল মায়ানি এবং আদ-দুররে মানসুরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে ফজল দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম আর রহমত দ্বারা উদ্দেশ্য কোরআন। মুফতি শফী (রহ.) বলেন, মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালার রহমত অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং একমাত্র তাতেই আনন্দিত হওয়া (মারেফুল কোরআন: ৬১১ পৃষ্ঠা)।

 আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা তোমাদের আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন। হজরত ওমর (রা.) বলেন যে, এই নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মদ (সা.) কে বোঝানো হয়েছে (বোখারি দ্বিতীয় খ- পৃষ্ঠা: ৫৬৬)।

 এবং শান্তি তাঁরই ওপর যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন মৃত্যুবরণ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন (সূরা মরিয়ম: ১৫)। এ আয়াতে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) এর সম্পূর্ণ জীবন বৃন্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

 আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা (আ.) এর কথা উদ্ধৃত করেন, এবং ওই শান্তি আমার প্রতি, যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, এবং যেদিন আমার মৃত্যু হবে, আর যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো (সূরা মরিয়ম: ৩৩)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মরিয়ম (আ.) এর গর্ভে হজরত ঈসা নবী (আ.) এর জন্মের কথাও জানিয়েছেন।

 পবিত্র কোরআনে আরও আছে, তাদের (মানুষ) আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিন (সূরা ইবরাহিম: ৫)। এ আয়াতে আল্লাহর দিনগুলো হলো সেসব দিন, যাতে বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল বা এমনসব দিন যেগুলোতে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁরই বড় নেয়ামত তথা আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন। নবী করিম (স.) জন্মদিন বড় ঘটনার অন্যতম।

 এবং আপনার প্রতিপালকের নেয়ামতের বেশি বেশি আলোচনা তথা প্রচার-প্রসার করুন (সূরা দোহা: ১১)। এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) নেয়ামত শব্দটির ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে উল্লিখিত নেয়ামত শব্দটি দ্বারা নবুয়ত ও দ্বীন  ইসলামকে বোঝানো হয়েছে (তাফসিরে ইবনে আব্বাস, সূরা দোহা : ৬৫১ পৃষ্ঠা)।

 আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আর রাসূলগণের কাহিনী থেকে সবকিছু আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি এজন্য যে, সেসবের দ্বারা আমরা আপনার চিত্তকে বলিষ্ঠ করবো (সূরা হুদ: ১২০)। আমরা দেখলাম, উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী ও রাসূলগণের আলোচনাকে মোমিনদের ঈমান ও শক্তিবর্ধক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ আয়াতে নবী- রাসূলগণের জীবনী আলোচনা করার বৈধতা ফুটে ওঠে।

 আর যে আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করবে, সেটা তার কলবে তাকওয়ার পরিচয়বাহক (সূরা হজ: ৩৬)। হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা নামক কিতাবে বলা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে চারটি- ১. কোরআন মাজিদ, ২. কাবা শরিফ, ৩. নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ৪. নামাজ ফায়েদা : নবীকে তাজিম করা তাকওয়ার পরিচয়বাহক।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্ব 

সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষের ফিতরাত বা স্বভাব হচ্ছে এই যে, মানুষ সুন্দর, আনন্দদায়ক, কল্যাণকর কোন বস্তু, ব্যক্তি ও ঘটনায় আনন্দিত হয়, আর অসুন্দর, দুঃখজনক ও অকল্যাণকর অবস্থায় ব্যথিত হয়। স্বভাব এমন যে, দুঃখের জীবন থেকে বের হয়ে আসতে সে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে। মানুষ যখনই এ দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে তখনই স্বধর্মীয়, স্বগোত্রীয় লোকদের নিয়ে করেছে আনন্দানুষ্ঠান। এ আনন্দানুষ্ঠানকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে ঈদ  অভিধানে ঈদ বলতে বুঝায় : কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়ার দিন বা স্মৃতিচারণের দিবসই ঈদ। কেউ কেউ বলেছেন, ঈদকে এজন্যই ঈদ বলা হয় যে, প্রতিবছর নব আনন্দ নিয়ে তা ফিরে আসে (আল-মুনজিদ, পৃ. ৫৩৯)।

আর মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম সময় (আল-মুনজিদ, পৃ. ৯১৮)। পারিভাষিক অর্থে মিলাদ বলতে জন্ম  সময়, জন্ম বৃত্তান্ত তথা কারো জন্ম তারিখে তার জীবন চরিত আলোচনা ও তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের অঙ্গীকার করা। মিলাদ শব্দটি যদিও আরবি, কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রচলন ফারসি ভাষা থেকে হয়েছে। অনেকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট না জেনে এ শব্দটি আরবি ভাষার আঙ্গিকে তুলে ধরে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করেন। ফারসিতে মিলাদ অর্থ জন্ম সময় (ফারহাঙ্গে জবানে ফারসি, পৃ. ১০৬৭)।

কোন নেয়ামত ও রহমত লাভ করলেই আনন্দোৎসব করা যেরূপ মানুষের স্বভাবজাত কাজ তদ্রƒপ আল্লাহ তাআলার নির্দেশও তাই। যেমন কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-(হে রাসূল!) বলুন : আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক (সূরা ইউনুছ: ৫৮)। এ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর রহমত বলতে কী বুঝানো হয়েছে সে স¤পর্কে ইবনে জারির তাবারী (রহ.) তাঁর তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন : অনুগ্রহ বলতে ইসলাম আর রহমত  দ্বারা আল-কুরআনে বুঝানো হয়েছে।আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.) আদ্দুররুল মানসুর তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন : এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে ইলম বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে মুহাম্মাদ (সা.)-কে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)। অর্থাৎ তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ আল-কুরআন ও ইসলাম বা রাসূলে খোদা (সা.)-কে পেয়েছ, এর জন্য আনন্দ করা তোমাদের অন্যতম কাজ। যদি কুরআন মজীদ ও দীন ইসলাম পাওয়ার কারণে আনন্দ করতে হয় তাহলে যার মাধ্যমে কুরআন ও দীন পেয়েছি, যিনি ছিলেন সমগ্র জগতের রহমত, তাঁর আগমন যে কত বড় নেয়ামত ও রহমত তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।

আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) তাইতো তাঁর রচিত মা সাবাতা মিনাসসুন্নাহ গ্রন্থে লিখেছেন : হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কাদর, ফজিলতের রাত্রি শবে বরাত, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত এ সবই রাহমাতুল্লিল আলামীনকে দান করা হয়েছে। যাঁকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, স্বয়ং তাঁর আগমন দিবস যে কত লক্ষ-কোটি দিবস-রজনীর চেয়ে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সামান্য জাগতিক নেয়ামত লাভ করলেও তার জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা আল-কুরআনে দেখতে পাই। যেমন আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ কামনা করে হযরত ঈসা (আ.) যে দোয়া করেছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। এরশাদ হয়েছে : ঈসা ইবনে মারইয়াম বলল : হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য ঊর্ধজগৎ হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন। এ হবে আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ ¯^রূপ, আর আপনার অন্যতম নিদর্শন (সূরা মায়িদা : ১১৪)। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাঞ্চা ভরা খাওয়া পেলে তা যদি হযরত ঈসা (আ.)-এর ভাষায় সৃষ্টির আদি হতে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ ও আল্লাহ তাআলার নিদর্শন হয় তাহলে সৃষ্টির সেরা মানব, রহমতের ভান্ডার রাসূলে পাক (সা.)-এর মতো এ মহান নেয়ামতের আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান, গুরুত্ববহ, কতই না আনন্দের তা সহজেই অনুমেয়। হযরত ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেন : আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার বংশের একজন সপ্নে তাকে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনার অবস্থা কি? সে জবাবে বলল, তোমাদেরকে ছেড়ে আসার পর আমার কল্যাণজনক কিছুই হয়নি, হ্যাঁ, এই আঙ্গুল (শাহাদাত অঙ্গুলি) দ্বারা পানি পাই। কারণ, এ আঙ্গুলের ইশারায় আমি দাসী সুয়াইবাকে মুক্তি দিয়েছিলাম। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ফাতহুল বারী এবং আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রহ.) তাঁর রচিত আইনী গ্রন্থে বর্ণনা করেন : ইমাম সুহাইলী (রহ.) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (রা.) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, অত্যন্ত দুরবস্থার মাঝে পতিত রয়েছে। সে বলল, তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি শান্তির মুখ দেখিনি। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব লাঘব করা হয়। হযরত আব্বাস (রা.) বলেন : তার এ আযাব লাঘবের কারণ হলো রাসূল (সা.)-এর জন্মদিন ছিল সোমবার। তাঁর জন্মের সম্পর্কে শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন : মানবতার শীর্ষে তুমি হলে উপনীত, রূপের ছটায় দূর করলে আঁধার ছিল যত- সকল গুণের সমাবেশে চরিত্রে মহান, তুমি ও তোমার বংশ পরে হাজারো সালাম। রাসূলে খোদা (সা.)-এর জীবন চরিত্র-সুন্নাহ হলো আল্লাহর কুরআনের বাস্তব দিক। যারা এ সুন্নাহর পুরোপুরি অনুসরণ করবেন, এ সুন্নাহকে বাস্তবায়ন করার কাজে ব্রতী হবেন তাঁদের জন্যই হবে রাসূলের জন্ম দিবস আনন্দের। যারা প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে নিজের, পরিবারের, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কাজ-কর্মকে রাসূলের জীবনের সাথে মিলাবেন, সে আয়নায় নিজেদেরকে দেখবেন, নিজেদের দোষ ত্রুটি চিহ্নিত করে পরবর্তী বছরের জন্য প্রস্তুতি নেবেন তাঁদের জন্য হবে এ দিবস ঈদের দিন।

যে ব্যক্তি সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদী কারবার করে, ঘুষ খায়, ঘুষ দেয়, ঘুষের লেনদেনে জড়িত, যে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরকে ঠকানোর ব্যবস্থা করে, যে মালিক অন্যায়ভাবে তার শ্রমিকদের ঠকায় ও শ্রমের মর্যাদা দেয় না, যে শ্রমিক কাজে ফাঁকি দেয় তার জন্য রাসূলে খোদার জন্মদিন হবে ভয়ের দিন, দুঃখের দিন। তার জন্য এ দিবস কিছুতেই ঈদ বা খুশির হতে পারে না। যে মিলাদ মাহফিলে রাসূলের জীবন চরিত্র আলোচনা হয় না, সুদ ঘুষ ও চোরাচালানির পয়সা দিয়ে যেখানে মিষ্টি হালুয়া ক্রয় করা হয়, তাদের এ মাহফিল ও পয়সা ব্যয় রাসূলের গলায় ছুরি চালানোর মতো।

যে আলেম সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে রাসূলের নির্দেশিত সত্যকে গোপন রাখে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না, সামান্য দাওয়াতের জন্য সুদখোর, মদখোর, জুয়াড়ি, বেনামাযী খোদাদ্রোহীর সাথে স¤পর্ক রাখে, তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী পালন হবে বনি ইসরাইলের স্বার্থান্বেষী দরবারি আলেমদের মতো যাদেরকে কুরআনে কুকুর বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।  এরশাদ হয়েছে : তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন। সে তা বর্জন করে (তাকে নিদর্শন মুক্ত পেয়ে) শয়তান তার পেছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে এ সব (নিদর্শন) দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদায় ভ‚ষিত করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে- তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়। তার ওপর তুমি বোঝা চাপালেও সে হাঁপাতে থাকে আর বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়। যে স¤প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এইরূপ। তুমি ঘটনা বলে দাও যাতে তারা চিন্তা করে (সূরা আরাফ : ১৭৫-১৭৬)।

তাই আজকের সমাজে বিদ্যমান সকল অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি¯ও জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে র্শিক থেকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম বিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থের এক মাত্র পথ হলো আল-কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, রাসূলে খোদা (সা.)-এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাসূলের এ চিরন্তন দাওয়াত পৌঁছানোর এবং তাঁর সাথে ভালোবাসা গড়ে তোলার মোক্ষম সময়। আমরা রাসূলের সাথে যত বেশি ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব, যত বেশি দরুদ ও  সালাম পাঠাব ততই বাতিল, তাগুত আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। আসুন ঘরে ঘরে রাসূলের জীবন চরিত্র আলোচনা ও বাস্তবে তা পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। ঈদে মিলাদুন্নবী সবার জন্য হোক মুবারক এটাই আমাদের প্রত্যাশা

লেখকঃ প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,আতাকরা কলেজ,কুমিল্লা, বাংলাদেশ ।।

Email:[email protected]

 

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020