1. mskamal124@gmail.com : thebanglatribune :
  2. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রপথিক-মোঃ হাবিবুর রহমান - The Bangla Tribune
এপ্রিল ২৯, ২০২৫ | ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ

খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রপথিক-মোঃ হাবিবুর রহমান

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, আগস্ট ১৫, ২০২২

খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার গল্প একদিনে অর্জিত হয়নি। অনেক চড়াই ও উতরাই পেরিয়ে এ অবস্থানে এসে তিনি পৌঁছেছেন। তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে উদ্বুদ্ধ করতেন।

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতেন। দুঃশাসন, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সোচ্ছার ছিলেন। নাগরিক অধিকার, মৌলিক চাওয়া-পাওয়া এবং মানবাধিকারের রক্ষায় তিনি নিপীড়িত জনগণের পক্ষে কাজ করতেন। শাষকগোষ্ঠীর নিকট সব কিছু থাকা সত্তে¡ও তিনি অসহায় বোধ করেননি। বরং সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী অস্ত্র ও গোলা বারুদ নিয়ে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে বাংলার আকাশে স্বাধীনতা লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক গৌরবজনক অধ্যায় রয়েছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলন ইত্যাদি থেকে বাঙলার স্বাধীনতাকামী মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। পলাশীর আ¤্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ায় দীর্ঘ দুইশত বছর পরাধীনতার শৃঙ্খলে এ বঙ্গের মানুষকে আবদ্ধ থাকতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হলে আবার শুরু হয় নব্য সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর শাসন ও শোষণ। কালের ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও অপশাসন থেকে মুক্তি পেতে আরো ২৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একাত্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুঁকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্নঃপ্রকাশ করে।

বিশ্বে যে সকল মনীষী ও মহাপুরুষ জাতির জন্যে কল্যাণকর জিনিস বয়ে এনেছেন, তাদের জন্ম এমন এক সময়ে হয়েছে যখন মানব সমাজ এক কালো অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছিলো। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এমন এক সময় হয়েছিল, যখন বিশ্ব প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা থেকে মুক্তি পেল মাত্র। পাশাপাশি ২য় মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল। বাল্যকাল থেকেই তাঁর কাজে কর্মে ভবিষ্যতের আভাস পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সৃজনশীল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। এছাড়াও মানবহিতৈষী কাজে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো অতুলনীয়। একজন নেতার যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তা তাঁর কাজে কর্মে ফুঁটে উঠতো।

একটি নতুন রাষ্ট্র পরিচালনায় যে ধরনের নিয়ম-কানুন, নীতি ও আইন প্রয়োজন, তা পূরণের জন্যে বঙ্গবন্ধু সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন আাইন কানুন প্রণয়ন করেন। এছাড়াও তিনি পৃথিবীর দুই পরাশক্তির দুইটি আদর্শিক ও তাত্তি¡ক বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করেন। মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোসালিস্ট রিপাবলিক (রাশিয়া) এবং ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) দুই মেরুতে অবস্থান করেছিল। যুদ্ধের শুরুতে আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা মুখোমুখিতে রূপ নেয়। মিত্রদের সহযোগিতার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব ও মিয়ানমারের নাগরিক উ থান্ট-এর কাছে এক চিঠিতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, “একটি যুদ্ধবিরতি হতে পারে এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যাহার হতে পারে”। যদি পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং সেখানকার নেতাদের সাথে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছায়। তিনি এটিও যোগ করেছিলেন, যদি একটি বিষয়ের আশ্বাস দেওয়া হয় যে মৌলিক কারণগুলি বস্তনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাহলে ভারত তার সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা ব্যতিত অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করবে না।” সোভিয়েত প্রেস এজেন্সি তাস পত্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঐ সময়  (১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১) “গানবোট কূটনীতি” এবং ভারতের বিরুদ্ধে “গুরুতর বø্যাকমেইল” এর জন্য অভিযুক্ত করেছে। যা টনকিন উপসাগর থেকে ভারত মহাসাগরের দিকে একটি আমেরিকান নৌ স্কোয়াড্রনের গতিবিধির সাথে তুলনা করা হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) নিরাপত্তা পরিষদে সে রাতে (১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে যাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সীমান্তের নিজস্ব দিক থেকে ভারতীয় ও পাকিস্তাানি বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছিল। নয় দিনের ব্যবধানে, এটি এমন একটি প্রস্তাবের তৃতীয় সোভিয়েত ভেটো ছিল। কাউন্সিলের ১১ (এগার) জন সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন; ব্রিটেন ও ফ্রান্স এ প্রস্তাব থেকে বিরত ছিল। পোল্যান্ড বিরোধিতা করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে যোগ দেয়। সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকভ এ মালিক বলেছেন যে তিনি আমেরিকান রেজুলেশন প্রত্যাখ্যান করেছেন এ কারণে যে, এতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন রাজনৈতিক নিষ্পত্তির আহ্বান অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ভোটের পরপরই ইতালি এবং জাপান একটি নতুন রেজুলেশন পেশ করে। যাতে তারা আশা করেছিল যে বড় শক্তিগুলির মধ্যে অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে পারে। তাদের প্রস্তাবে “একটি ব্যাপক রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য আলোচনার অবিলম্বে খোলার” পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির জন্য “প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে” এবং সীমান্তের কোনও ইঙ্গিত ছাড়াই বিচ্ছিন্নকরণ এবং প্রত্যাহারের অপারেশন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোন কিছুই ফলপ্রসূ হয়নি। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এতদ্সত্তে¡ও বঙ্গবন্ধু মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি জন্যে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে একই সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করেন। তার নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার কারণে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি, লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ, নেতা, শিল্পী ও ভাস্কর প্রমূখ গুণিজন তাদের চিন্তা-ধারা তাঁদের লেখনি ও গবেষণা কর্মে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কন্যা শেখ হাসিনা সিএনএন এর এশিয়াওইয়ক ম্যাগাজিন-এর স্টোরি পেইজ এ লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা নামক একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্রায় এক হাজার বছর ধরে ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী জোয়ালের নিচে হাহাকার করে আসা বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

বিশ্বের বিভিন্ন গুণিজনকে কিছু বিপথগামী ব্যক্তি কর্তৃক গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে, যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার নিরাপত্তা রক্ষী কর্তৃক ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর নিহত হন। এছাড়াও তাঁর পুত্র ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে হত্যা করা হয়েছে। রাজীব গান্ধী মূলত তামিল নাডুর নির্বাচনী র‌্যালিতে এক নারী আতœঘাতি বোমায় নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসেও বেশ কিছু গুপ্তহত্যার ঘটনা জাতিকে মর্মাহত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়। শ্রীলঙ্কা, এশিয়া ও বিশে^র বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণমানুষের অধিকারের জন্যে যারা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁদেরকে ঘাতকরা বেশি দিন বাঁচতে না দিলেও, তাদের মানুষ স্মরণ করে। তাঁদের দর্শন ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে কিছু নিবেদিত প্রাণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আজকের এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্যে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা। এ শোককে শক্তিতে পরিণত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়ন করার জন্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর লিখিত গ্রন্থগুলো তাঁর দর্শন ও নীতি জানতে সহায়তা করবে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে তাঁর এ সকল বই অধ্যয়নের মাধ্যমে তাঁর দর্শন অনুসন্ধান করতে হবে। স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

লেখক,

মোঃ হাবিবুর রহমান

লেখক, কবি ও গবেষক, ই-মেইল: mirmohammadhabib@gmail.com

 

 

 

 

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020