আগস্টের শেষ দিকে এসএসসি আর এইচএসসি অক্টোবরে শুরু হতে পারে

ক্যাম্পাস বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  করোনায় দুই বছরের তাণ্ডবলীলা পেরিয়ে একটু একটু করে যখন পড়াশোনা ছন্দে ফিরছিল তখনই আঘাত হানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা। দেশের ১৭টি জেলায় বন্যার তাণ্ডবে পড়াশোনা ও পরীক্ষাসূচি পিছিয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে তা এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন। এই অস্পষ্ট অবস্থার মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘শিক্ষায় কী হবে’?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা এবার ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সরকার ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
সারাদেশে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা। কিন্তু বন্যাদুর্গত এলাকায় অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বন্যার কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর তারিখ জানাতে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, আগামীকাল রবিবার দুপুর ১টায় মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এসে এসএসসি ও  এইচ এস সির পরীক্ষা নিয়ে কথা বলবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে বানভাসি শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে- কথাটি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবেন। মন্ত্রী আগামী ১৫ আগস্টের পর থেকে যে কোনো দিন পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিতে পারেন। ১৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একটি সূত্র দি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে। পাশাপাশি আগের ঘোষিত রুটিনও কাটছাঁট হতে পারে বলে জানা গেছে।আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, অধিকাংশ স্থানে বন্যার পানি নেমে গেছে। যেসব স্থানে পানি রয়েছে সেখানের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে এখনো ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে সেগুলো পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ শুরু করা হয়েছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিলে সে অনুযায়ী আমরা সংশোধিত রুটিন তৈরি করব। রুটিন প্রকাশের পর এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) করোনা মহামারির জেরে অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে মধ্যম ও উচ্চমাত্রায় শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে। এ শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা পূরণে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই অনেকটা সময় চলে গেছে। তাই এখনই এসব সুপারিশসহ আরো যা করণীয়, তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
বেডু বলছে, মধ্যম ও উচ্চমাত্রার শিখন ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এ জন্য শিক্ষকদের মতামতের পাশাপাশি শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ওই ঘাটতি পূরণে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বেডু বলছে, শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয়ভাবে কার্যক্রম হাতে নেয়া প্রয়োজন। এর অংশ হিসেবে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম, যেমন- টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার, অনলাইন ক্লাস প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সূচির ভিত্তিতে টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচারের পাশাপাশি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে ক্লাসগুলো আপলোড করার পরামর্শ দিয়েছে বেডু। এসব ক্লাস সাজানোর দায়িত্ব যৌথভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও বেডুকে দেয়া যেতে পারে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *